মেহেরপুর প্রতিনধি:
হজে গিয়ে ভিক্ষা করার সময় সৌদী আরবের মদিনাতে পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন মতিয়ার রহমান।এক সময়ের শীর্ষ চরমপন্থি ছিলেন তিনি। মতিয়ার রহমান মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সিন্দুরকৌটা গ্রামের ঘাটপাড়া এলাকার হারুন অর রশিদের ছোট ছেলে। মেহেরপুরের গাংনী থানা পুলিশ জানিয়েছে, তার বিরুদ্ধে বর্তমানে দুটি মামলা চলমান রয়েছে। সম্প্রতি তিনি গ্রেফতারও হয়েছিলেন।
স্থানীয় গ্রামবাসী জানান, প্রায় ২০ বছর আগে গাংনী উপজেলার মেহেরপুর কুস্টিয়া সড়কের চোখতোলা নামক মাঠের মধ্যে বোমা বানাতে গিয়ে দুটি হাতের কব্জী উড়ে যায় তার। পরে চিকিৎসক তার দুটি হাত কেটে ফেলেন। বিভিন্ন মামলায় সে বেশ কিছুদিন জেল হাজত খেটেছেন। দীর্ঘদিন মামলা চলার পর মামলা থেকে রেহায় পান তিনি। তারপর থেকেই এই শীর্ষ সন্ত্রাসী মতিয়ার রহমান পথে পথে ঘুরে বেড়িয়েছেন দীর্ঘদিন।
হঠাৎ শুরু হয় মতিয়ারের হজ্ব ব্যবসা। প্রতি বারই হজ্বের সময় হজ্বের নামে সৌদী আরবে যান তিনি। সেখানে গিয়ে সৌদীর পথে পথে ভিক্ষাবৃত্তি করে মোটা অংকের টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরেন। এভাবে সে কয়েক বছরে ১০ থেকে ১২ বিঘা জমি চাষের জমি কিনেছেন। এবার সৌদী আরবের মদিনায় ভিক্ষাবৃত্তির সময় পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর খবরটি এলাকায় পৌছালে মানুষের মধ্যে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। তাকে নিয়ে গ্রামের চায়ের দোকান ও মোড়ে মোড়ে শুরু হয়েছে নানা গল্প।
মতিয়ার রহমানের স্ত্রী মমতাজ খাতুন বলেন, আমার স্বামী হজ্বে যান। হজ্ব করে ফেরার সময় প্রতি বারই মোটা অংকের টাকা নিয়ে আসেন। আমি তো তাকে জিজ্ঞেস করেছি। কিন্তু তেমন কোনো উত্তর দেইনি কখনো। এখন শুনছি সেখানে গিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে। এটা আমার পরিবারের ও ছেলে মেয়েদের কাছে লজ্জার বিষয়।
জানা গেছে, ভিক্ষাবৃত্তি করার সময় গত ২২ জুন মদিনা পুলিশ তাকে আটক করেন। সে সময় মতিয়ার পুলিশকে সহ সবাইকে বলছিলেন, তার মানিব্যাগটি ছিনতাই হয়ে গেছে। যে কারনে এই কাজ করছেন। পুলিশের সন্দেহ হলে তাকে আটক করে স্থানীয় থানায় নেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে বাংলাদেশ হজ মিশনের হস্তক্ষেপে মুচলেকা নিয়ে ওই ব্যক্তিকে ছাড়িয়ে নেন।
কাউন্সিলর (হজ¦) জহুরুল ইসলাম বিভিন্ন গণমাধ্যমকে জানান, মতিয়ার ধানসিঁড়ি ট্র্যাভেল এজেন্সির সার্ভিসের মাধ্যমে হজ করতে সৌদি গিয়েছিলেন। তবে বিভিন্ন পত্রিকার বরাতে জানা গেছে, মতিয়ার সৌদিতে কোনো হোটেল বুক করেননি। তাকে গাইড করার মতো কোনো মোয়াজ্জেমও ছিল না।
স্থানীয় মটমুড়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন জানান, প্রতি বছরই মতিয়ার রহমান হজ্বে যান। তার হজ্বে যাওয়া নিয়ে গ্রামের মানুষের মাঝে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এলাকার মাত্র ুু একজন হজ্বে গেলেও মতিয়ার রহমান যান প্রতিবারই। এ পর্যন্ত তিনি চার বার হজে¦ গিয়েছেন। কিন্তু কেউ জানতো না সে হজ্বের নামে ভিক্ষা বৃত্তি করেন। তার আটক হওয়ার পর খবর ছড়িয়ে পড়ে গ্রামে।
গাংনী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক জানান, মতিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে, মারামরি ও হাঙ্গামার অভিযোগে থানায় দুটি মামলা রয়েছে। গাংনী থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলা নং ৭, তারিখ ১১/০৭/২০১১ ইং ও মারামরির অভিযোগে মামলা নং ১৬, তারিখ ১২/০৪/২০১০ ইং। সাম্প্রতিক সময়ে গ্রেফতারও হয়েছিলেন এই মতিয়ার।
পূর্ববর্তী খবর