নিজস্ব প্রতিবেদক:
মেহেরপুরের কৃতী সন্তান মোজাফফর হোসেন ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল হুমায়ুন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন। মোজাফ্ফর হোসেন তার ‘পাঠে বিশ্নেষণে বিশ্বগল্প ছোটগল্পের শিল্প ও রূপান্তর’ গ্রন্থের জন্য ‘হুমায়ূন আহমেদ তরুণ সাহিত্যিক পুরস্কার’ পান।
১০ বছরের বৃত্ত পূরণ করল ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার। কিন্তু এর নবম আসরের প্রস্তুতিকালে করোনার তীব্র ছোবল তছনছ করে দেয় সবার জীবন ও বাস্তবতাকে। অদৃশ্য এক জীবাণুর থাবায় থমকে যায় পুরো পৃথিবী। ফলে অনুষ্ঠানের সব আয়োজন সম্পন্ন করলেও থেমে যায় আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। সামাজিক দূরত্বের নিয়ম মেনে আর আয়োজন করা হয়নি সেই মিলন মেলার। এবারও যখন সব আয়োজন শেষ, তখন ফুঁসে উঠেছে করোনার তৃতীয় ঢেউ। কিন্তু সেই ঢেউয়ের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গতকাল শুক্রবার পর্দা উঠেছে ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার অনুষ্ঠানের। এবারের আসরে সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হয়েছে একসঙ্গে দুই বছরের- ২০১৯ ও ২০২০ সালের।
গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে বসে ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কারের নবম ও দশম আসর। শীতের হিমেল বিকেলে অন্ধকার ভেদ করে আলোকিত হয়ে ওঠে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হারমোনি হল। এক যুগেরও বেশি আগে এই পুরস্কারের আয়োজন করা হয়েছিল দেশের সাহিত্যাঙ্গনের কৃতীজনকে কাজের স্বীকৃতি দিয়ে অনুপ্রাণিত করতে। এরই মধ্যে এই আয়োজন দেশের সাহিত্য জগতের অন্যতম অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। করোনার চোখ রাঙানির মধ্যেও এই আয়োজনে ছিল সৃজনশীলতার পরশ। পাঠকের জন্য পুরো অনুষ্ঠান লাইভ সম্প্রচার করেছে সমকাল অনলাইন।
ছুটির দিনের সন্ধ্যায় প্রায় তিন ঘণ্টার অনুষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয় পূজা সেনগুপ্তের নৃত্য-ভাবনা ও নির্দেশনায় তুরঙ্গমী রেপার্টরি ড্যান্স থিয়েটারের নৃত্য দিয়ে। এরপর এমন দহন দিনে কণ্ঠশিল্পী অদিতি মহসিন গেয়ে ওঠেন কবিগুরুর ‘বিপুল তরঙ্গ রে’। এই গানে যেন নতুন উজ্জীবন তৈরি হয় হলরুমজুড়ে। একে একে তিনি গেয়েছেন চারটি গান আর জীবনের আবাহনে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন শ্রোতারা।
এরপর পুরস্কার আয়োজনের আদ্যোপান্ত দুটি তথ্যচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরেন সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান ও ব্র্যাক ব্যাংকের হেড অব কমিউনিকেশনস ইকরাম কবীর।
এরপর আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। কোলাহলমুখর পুরো হলে নিমেষেই নেমে আসে পিনপতন নীরবতা। ঘোষণা করা হয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাহিত্যিকদের নাম। জুরি বোর্ডের সদস্যরা পর্যায়ক্রমে নাম ঘোষণা করতে থাকেন আর তুমুল করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে মিলনায়তন। ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার-২০১৯ পেয়েছেন প্রাবন্ধিক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, কবি হেলাল হাফিজ ও লেখক মোজাফ্ফর হোসেন। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তার ‘দীক্ষাগুরুর তৎপরতা’ গ্রন্থের জন্য ‘প্রবন্ধ, আত্মজীবনী, ভ্রমণ ও অনুবাদ’ শাখায় এবং হেলাল হাফিজ তার ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’ গ্রন্থের জন্য ‘কবিতা ও কথাসাহিত্য’ শাখায় পুরস্কৃত হন। আর মেহেরপুরের কৃতী সন্তান মোজাফ্ফর হোসেন তার ‘পাঠে বিশ্নেষণে বিশ্বগল্প ছোটগল্পের শিল্প ও রূপান্তর’ গ্রন্থের জন্য পান ‘হুমায়ূন আহমেদ তরুণ সাহিত্যিক পুরস্কার’।
‘দীক্ষাগুরুর তৎপরতা’ কথাপ্রকাশ, ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’ দিব্যপ্রকাশ এবং ‘পাঠে বিশ্নেষণে বিশগল্প ছোটগল্পের শিল্প ও রূপান্তর’ গ্রন্থটি পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি. প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়।
ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার-২০২০ অর্জন করেছেন কবি মোহাম্মদ রফিক, গবেষক আফসান চৌধুরী ও রঞ্জনা বিশ্বাস। কবি মোহাম্মদ রফিক তার ‘পথিক পরান’ গ্রন্থের জন্য ‘কবিতা ও কথাসাহিত্য’ শাখায় এবং আফসান চৌধুরী তার ‘১৯৭১ গণনির্যাতন-গণহত্যা কাঠামো, বিবরণ ও পরিসর’ গ্রন্থের জন্য ‘প্রবন্ধ, আত্মজীবনী, ভ্রমণ ও অনুবাদ’ শাখায় পুরস্কৃত হন। আর রঞ্জনা বিশ্বাস তার ‘বাংলাদেশের লোকধর্ম’ গ্রন্থের জন্য পেয়েছেন ‘হুমায়ূন আহমেদ তরুণ সাহিত্যিক পুরস্কার।’
‘পথিক পরান’ নাগরী প্রকাশনী, ‘১৯৭১ গণনির্যাতন-গণহত্যা কাঠামো, বিবরণ ও পরিসর’ কথাপ্রকাশ এবং ‘বাংলাদেশের লোকধর্ম’ গ্রন্থটি বেহুলা বাংলা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়।
এবারের পুরস্কারে প্রথম দুটি শাখার প্রত্যেক বিজয়ী পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন দুই লাখ টাকা, ক্রেস্ট ও সম্মাননা। তরুণ লেখক পেয়েছেন এক লাখ টাকা, ক্রেস্ট ও সম্মাননা। অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রত্যেকের ওপর নির্মিত আলাদা সংক্ষিপ্ত তথ্যচিত্রও প্রদর্শিত হয়। দুই বছরে পুরস্কারের জন্য তিন শাখায় এবার এক হাজারেরও বেশি বই জমা পড়েছিল। কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন; প্রাবন্ধিক, অনুবাদক খালিকুজ্জামান ইলিয়াস; অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ ও কবি আবিদ আনোয়ারের সমন্বয়ে গঠিত জুরি বোর্ড সেরা বই নির্বাচন করেছে।
দেশের সাহিত্যাঙ্গনের অন্যতম সেরা এ পুরস্কার ঘোষণা ও বিতরণ অনুষ্ঠানে সমবেত হয়েছিলেন দেশসেরা সাহিত্যিক, কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, শিল্পী, সংস্কৃতিসেবীসহ সাহিত্যমনস্ক বিজ্ঞজন। গুণীজন ও বিশিষ্টজনের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছিল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের এই অনুষ্ঠানস্থল। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
বিজয়ীদের উত্তরীয় পরিয়ে দেন ও হাতে পুরস্কারের সম্মাননা স্মারক এবং চেক তুলে দেন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, বিচারকম লীর সদস্য কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, অনুবাদক খালিকুজ্জামান ইলিয়াস, অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ, কবি আবিদ আনোয়ার, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন, এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি ও টাইমস মিডিয়া লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদ এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আর. এফ. হোসেন। সভাপতিত্ব করেন সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সমকালের ফিচার সম্পাদক মাহবুব আজীজ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, একটি জাতির সব মানুষের চাওয়া-পাওয়ার অপূর্ব সম্মিলন সাহিত্য। সাহিত্যিকরাই তৈরি করেন আগামীর মননজগৎ। তিনি ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ীদের অভিনন্দন জানান। ব্র্যাক ব্যাংক এবং সমকালকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, সাহিত্যিকরা জাতিকে অনেক কিছু দিয়েছেন। তারা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে সবাইকে অনুপ্রাণিত করে যাবেন।
সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন পুরস্কারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, সংবাদপত্র সঠিক সংবাদ পরিবেশন করে জনগণের অধিকার বোধ ও ক্ষমতা এবং সমৃদ্ধিকেই তুলে ধরে। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ জানা জনগণের অধিকার- সংবাদপত্র তার বাহন মাত্র। সংবাদমাধ্যম এখন অনেক বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়েছে। আধুনিক প্রযুক্তির গুণে মুহূর্তের খবর মানুষ মুহূর্তে পাচ্ছেন এবং প্রতিক্রিয়া জানাতে পারছেন। সমকাল প্রকাশিত হয় ২০০৫ সালে, তারপর থেকে সাংবাদিকতার সঙ্গে আমরা বিভিন্ন কিছুর সমন্বয় ঘটিয়েছি। এরই একটি প্রতিফল ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার, যা শুরু হয়েছে ২০১১ সাল থেকে। আগামীতেও সমকালের এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি ও টাইমস মিডিয়া লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদ বলেন, যারা এ বছর পুরস্কার পেয়েছেন তারা প্রকৃতই এ পুরস্কারের যোগ্য। সমকাল লেখক-সাহিত্যিকদের অনুপ্রাণিত করতে পারছে, এটাই আমাদের বড় পাওয়া। গুণিজনের যে সম্মানিত করতে পেরেছি, সেটিই আমার জন্য বড় আনন্দের এবং গর্বের।
ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, এ পুরস্কারের দশম আসরে ব্র্যাক ব্যাংককে সঙ্গে রাখার জন্য সমকালকে ধন্যবাদ। লেখক-সাহিত্যিকদের বিশেষ করে তরুণ লেখকদের উৎসাহিত করার জন্য আমরা এ পুরস্কারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছি। এ পুরস্কার বাংলা সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ একটি স্থান দখল করেছে। আমরা মনে করি, শিল্প-সাহিত্য ক্ষেত্রে এ ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা একটি বিনিয়োগ। ব্র্যাক ব্যাংক সেই বিনিয়োগ অব্যাহত রাখবে।
অনুষ্ঠানে ওঠে আসে সমকালের প্রয়াত সম্পাদক গোলাম সারওয়ারের নাম। যার হাত ধরে এ পুরস্কারের যাত্রা শুরু হয়। বক্তারা তাকে স্মরণ করেন গভীর শ্রদ্ধায়।
ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার ২০১৯-২০ জুরি বোর্ডের পক্ষে বক্তব্যে অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল কর্তৃপক্ষ বড় একটি কঠিন দায়িত্ব পালনের জন্য আমার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেছিল। আমি আমার সামান্য জ্ঞান দিয়ে সেই দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি বলে গর্বিত। ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার এখন আমাদের দেশের স্বীকৃত উঁচুমানের সাহিত্য পুরস্কার। যারা এ পুরস্কার অর্জন করেন তারা আমাদের কাছে অনুসরণীয় ও বরণীয়।
পুরস্কার পাওয়ার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত। সাহিত্য মানুষকে মিলিত করে, সমৃদ্ধ করে। কিন্তু আজকের পৃথিবীতে বিচ্ছিন্নতাই সত্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেজন্য সাহিত্য এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান। প্রযুক্তির ফলে সভ্যতার যে অগ্রগতি হয়েছে, সেখানে প্রযুক্তি সাহিত্য এবং বইকে সহায়তা দিচ্ছে। প্রযুক্তি যতই অগ্রসর হোক, যতদিন এ পৃথিবীতে মানুষ থাকবে, ততদিন বই থাকবে। কারণ, মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা বইয়ের মাধ্যমেই ফুটে উঠবে। বই মানুষের সঙ্গী। এই সঙ্গী কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করে না। তিনি বলেন, ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার বইয়ের অগ্রযাত্রায় একটি দৃষ্টান্ত।
কবি হেলাল হাফিজ বলেন, বাংলা সাহিত্যের বীর রসের কথা কিন্তু নজরুলের বিদ্রোহীও নয়, আমার নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়ও নয়। শ্রেষ্ট বীর রসের কথাটি রবীন্দ্রনাথের- ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে।’ ১৯৮৬ সালে আমার প্রথম কাব্য ‘যে জ্বলে আগুন জ্বলে’ গ্রন্থের প্রথম কবিতা ছিল- ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’। সে সময়ে এ ভুখণ্ডের সাড়ে সাত কোটি মানুষের এই সম্মিলিত আকঙ্ক্ষার প্রতিফলন ছিল সেই কবিতা। যে সময়ে ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ লিখেছিলাম, যুদ্ধবিরোধী মানুষ হয়েও তখন সেই কবিতা না লিখে উপায় ছিল না। কবিতা দিয়ে মানুষকে ভালোবাসার পথে আনা যায়। আজ মনে হচ্ছে তা সার্থক। আমাকে সম্মানিত করার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
পুরস্কৃত আফসান চৌধুরী বলেন, ‘আমাকে পুরস্কৃত করার জন্য ধন্যবাদ। আমাদের দেশে আমরা স্বল্প কিছু মানুষের ইতিহাস রচনা করেছি, এটি রাজনীতির সীমাবদ্ধতার কারণে। বাংলাদেশ জন্মেছে দুইশ বছরের সংগ্রামের কারণে। সেই সংগ্রামের নেতৃত্বে ছিলেন কৃষক সমাজ, এই কৃষক সমাজ বিদ্রোহী কৃষক সমাজ। এ কৃষক সমাজ মুক্ত হয়ে গেছে, তাদের মধ্যবিত্তকে দরকার নেই। এ বয়ানটি বুঝতে হলে দুই হাজার বছরের ইতিহাস বুঝতে হবে। এই সংগ্রাম দীর্ঘদিন ধরে চলছে। একাত্তর হচ্ছে, যে মুহূর্তে এই সংগ্রাম সফল হয়েছে। এটি কোনো রাষ্ট্র কিংবা সমাজের নয়, জনগোষ্ঠীর বটে। ফলে লিখতে হলে সবার ইতিহাস লিখতে হবে।’
কবি মোহাম্মদ রফিক বলেন, ‘বাংলা ভাষায় যে যা লিখবে, সেটিই বাংলা সাহিত্য। বিভাজন নয়, আমরা চাই সম্মিলন। আমরা চাই একসঙ্গে সবারই অগ্রগতি হোক। আসুন একসঙ্গে বাংলা সাহিত্য তৈরি করি।’
তরুণ লেখক মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘লেখার সময় পুরস্কারের বিষয় মাথায় ছিল না। আমি একেবারে প্রান্তিক জায়গা থেকে এসেছি। আমার বেড়ে ওঠা সীমান্তবর্তী একটি গ্রামে। এমন পুরস্কারপ্রাপ্তি আমার মধ্যে দায়িত্ববোধ বাড়িয়ে দিয়েছে।’
তরুণ লেখক রঞ্জনা বিশ্বাস বলেন, ‘এ পুরস্কারের অংশীদার আমি একা নই। এ পুরস্কারের অংশীদার লোকধর্ম সম্প্রদায়ের সবাই। এ ছাড়া প্রকাশক, আমার স্বজন এবং যারা আমাকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন। এক সময় আমি একজন গৃহিণী ছিলাম। কিন্তু যখন এ পথে নেমেছি, তখন দেখলাম আমি আর একা দাঁড়িয়ে নেই। আমার কাজে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ব্র্যাক ব্যাংক ও সমকালকে ধন্যবাদ জানাই।’