❏ সাইফউদ্দিন মো: মছিহ রানা :
আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের সুদৃঢ় এবং বদ্ধমূল স্পৃহাই ইতিকাফের মূল কথা। একমাত্র মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি বিধানের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পরীক্ষাস্থল দুনিয়াকে পিছু ঠেলে দিয়ে মসজিদে অবস্থান করাকে সাধারণ অর্থে ইতিকাফ বলা যেতে পারে।
ইতিকাফের অর্থ : ইতিকাফ আরবি ‘আকফ’ মূল ধাতু থেকে গঠিত একটি শব্দ। আকফ শব্দের অর্থ হলো অবস্থান করা। যেমন আল্লাহর বাণী ‘ওয়া আনতুম আ’কিফুনা ফিল মাসজিদি’ আর তোমরা সালাতের নির্দষ্টি স্থানসমূহে অবস্থানরত- (সূরা বাকারা : ১৮৭)। আভিধানিকভাবে কোনো বস্তুকে বাধ্যতামূলক ধারণ করা কিংবা কোনো বস্তুর ওপর নিজেকে দৃঢ়ভাবে আটকে রাখার নাম ইতিকাফ। ইতিকাফ শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা অর্থাৎ কোনো জিনিসকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা ও তার প্রতি মনকে আবদ্ধ রাখা। ইসলামের পরিভাষায় আল্লাহ তাআলার নৈকট্য হাছিলের নিয়তে মসজিদকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা এবং সেখানে অবস্থান করা। অন্য অর্থে মহান আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশের নিমিত্তে ও তার সন্তুষ্টি বিধানের লক্ষ্যে নিঃসঙ্গ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান করে ইবাদত-বন্দেগি, তাসবিহ-তাহলিল, জিকির-আসকার ও অন্যান্য ধর্মীয় কর্মসম্পাদন করাই হলো ইতিকাফ।
ইতিকাফের উদ্দেশ্য: ইতিকাফের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে- পার্থিব মোহনীয়তার সব জাল ছিঁড়ে আল্লাহর সঙ্গে পরিপূর্ণ ও গভীর প্রেমময় সম্পর্ক স্থাপন করা।
ইতিকাফ ৩ প্রকার-১. ওয়াজিব, ২. সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, ৩. নফল ইতিকাফ।
১. ওয়াজিব ইতিকাফ : কোনো কারণবশত যদি কেউ ইতিকাফের নিয়ত বা মান্নত করে তা আদায় করা ওয়াজিব। রোজাসহ এইরূপ ইতিকাফ আদায় বা পালন করা আবশ্যক।
২. সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ইতিকাফ : যা মাহে রমজানের শেষ ১০ দিন করা হয়। মসজিদ এলাকার কিছুসংখ্যক লোক ইতিকাফ করলে সবার পক্ষ থেকেই আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু কেউই যদি আদায় না করে তবে সবাই গুনাহগার হবে। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) সবসময় রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন।
৩. নফল ইতিকাফ : নফল ইতিকাফের জন্য কোনো মাস বা নির্ধারিত সময়ের প্রয়োজন হয় না। যে কোনো মাসে যে কোনো সময়ে এই নফল ইতিকাফ করা যায়।
সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ইতিকাফ-এর মূল উদ্দেশ্য: পবিত্র রমজানে শবেকদরকে তালাশ করতে গিয়ে মহানবী (সা.) এর প্রথম দশকে ইতিকাফ করেছেন, অতঃপর দ্বিতীয় দশকেও ইতিকাফ করেছেন। কিন্তু পরে ঐশী নির্দেশনার আলোকে তিনি জানতে পেরেছেন, সেই মহিমান্বিত রজনী রমজানের শেষ দশকে। তারপর প্রিয় নবী (সা.) রমজানের শেষ দশকেও ইতিকাফের হালতে কাটিয়েছেন।
ইতিকাফের বিধিসম্মত সময়: মাহে রমজানের ২০ তারিখ সূর্য অস্ত যাওয়ার কিছু আগে থেকে শুরু হয় এবং ঈদের চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গেই তা শেষ হয়ে যায়। ইতিকাফকারী পুরুষ ২০ রমজান আসরের নামাজের পর সূর্যাস্তের আগে মসজিদে পৌঁছাবেন এবং কোণে একটি ঘরের মতো পর্দা দিয়ে ঘেরাও করে অবস্থান নেবেন; এমনভাবে যেন প্রয়োজনে জামাতের সময় পর্দা খুলে
মুসল্লিদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা করা যায়। এ স্থানে পানাহার ও শয়ন করবেন এবং বিনা প্রয়োজনে এখান থেকে বের হবেন না। তবে প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বা ফরজ গোসল প্রভৃতি কাজে অথবা শরিয়তের প্রয়োজনে যেমন জুমার নামাজ প্রভৃতির জন্য বের হওয়া জায়েজ।
ইতিকাফের গুরুত্ব: মাহে রমজান আত্মশুদ্ধি, মানসিক উত্কর্ষ সাধন ও দৈহিক সুষমা পূর্ণতার মাস। পবিত্র রমজানের বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের অন্যতম ইতিকাফ পালন। যার মাধ্যমে রোজাদার রোজা পালনের মাহাত্ম্যকে বৈশিষ্ট্যিমণ্ডিত করে তোলেন। এ মাসেই মুমিন আধ্যাত্মিক সাধনায় চরম উত্কর্ষ লাভ করেন। ইতিকাফ রমজান মাসের সামগ্রিক কল্যাণ ও প্রভূত সৌভাগ্য-বরকত লাভের বলিষ্ঠ সহায়কশক্তি। আর এ মাসেই রয়েছে এমন একটি রাত, যা হাজার মাস থেকে উত্তম। সেই রাতের পূর্ণ সওয়াব লাভ করার জন্য ইতিকাফের গুরুত্ব ও উপকারিতা অপরিসীম। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিস থেকে জানা যায়, হুজুর (সা.)-এর মৃত্যুর পর তার (সা.) পবিত্র স্ত্রীরাও এ সুন্নতের অনুসরণ করতেন (সহিহ মুসলিম)। হুজুর (সা.) রমজান মাসে ১০ দিনই ইতিকাফে বসতেন। হজরত নবী করিম (সা.) জীবনের শেষ রমজানে ২০ দিন ইতিকাফ করেছিলেন।
ইতিকাফের ফজিলত: ইসলামী আইনশাস্ত্রে ইতিকাফের ব্যাপক ফজিলত উল্লেখ করা হয়েছে। মহানবীর (সা.) বাণীমতে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানে নিষ্ঠার সঙ্গে একদিন ইতিকাফ পালন করবে, আল্লাহপাক জাহান্নামকে তার থেকে তিন খন্দক (এক খন্দকের দূরত্ব ভূমণ্ডল থেকে নভোমণ্ডলের চেয়েও বেশি) দূরে সরিয়ে দেবেন।’ হাদিসে আরও রয়েছে, ইতিকাফরত ব্যক্তি সব ধরনের গুনাহ থেকে মুক্ত থাকেন এবং তার আমলনামায় এত বেশি পুণ্য লিপিবদ্ধ করা হয় যেন সে সর্বপ্রকার পুণ্যকাজ সম্পন্ন করেছে। রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি মাহে রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করবে, তাকে এক ওমরা পরিমাণে সওয়াব দেয়া হবে। অপর হাদিসে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি মাহে রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করবে, তার আমলনামায় দুটি হজ বা দুটি ওমরা হজের সওয়াব লিখে দেয়া হবে। অন্য হাদিসে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি সারাজীবনে একদিনের জন্য হলেও ইতিকাফ করবে কেয়ামতের দিন তার নিকট থেকে দোযখ ১৫শ’ বছরের পথ দূরে থাকবে। রাসূল (সা.) বলেন, ইতিকাফকারী সব গোনাহ থেকে বেঁচে থাকে। মসজিদের বাইরে যত মানুষ যত ইবাদত ও নেক আমল করে থাকে ইতিকাফকারী তা না করতে পারার কারণে মহান আল্লাহতায়ালা দয়া করে তার আমলনামায় ওইসব নেক আমলের সাওয়াব লিখে দেন।
ইতিকাফের স্থান: ইতিকাফের জন্য উপযুক্ত স্থান হলো জামে মসজিদ। এ প্রসঙ্গে কোরআন করিমে উল্লেখ রয়েছে- `ওয়া আনতুম আকিফুনা ফিল মাসাজিদ’ অর্থাৎ তোমরা মসজিদে ইতেকাফ করো (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৭)। হাদিসেও নির্দেশ এসেছে হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, `লা ইতিকাফা ইল্লা ফিল মাসজিদুল জামে’ অর্থাৎ জামে মসজিদ ছাড়া ইতিকাফ নেই। (আবু দাউদ, কিতাবুল ইতিকাফ, পৃষ্ঠা-৩৩৫)। ইমামরা এ বিষয়ে ঐকমত্য সদ্ধিান্ত দিয়েছেন, বিভিন্ন অসুবিধার কারণে ইতিকাফ যে কোনো মসজিদে বা অপারগতার কারণে মসজিদের বাইরেও ইতিকাফ হতে পারে।
মহিলাদের ইতিকাফ : ঘরের যে অংশে সাধারণত নামাজ পড়া হয় সেই রকম কোনো অংশকে ইতিকাফের জন্য নির্দষ্টি করে দশ দিন কিংবা কম সময়ের জন্য ইতিকাফের নিয়ত করে সেই জায়গায় বসে ইবাদাত বন্দেগি শুরু করবেন। শরয়ী কোনো ওযর ছাড়া সেখান থেকে উঠে অন্যত্র না যাওয়া। (রাতে সেখানেই ঘুমাবেন)। ইতিকাফ অবস্থায় যদি মহিলাদের মাসিক শুরু হয়ে যায় তাহলে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে।
ইতিকাফের শর্ত : ১.মুসলমান হওয়া ২. পাগল না হওয়া ৩. বালেগ হওয়া ৪. নিয়ত করা ৫. ফরজ গোসলসহ হায়েজ নেফাস থেকে পবিত্র হওয়া ৬. মসজিদে ইতিকাফ করা (ইমাম মালেক র:-এর মতে জামে মসজিদে ইতিকাফ করা উত্তম। ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম আহমদ বিন হাম্বল র:-এর মতে, যে মসজিদে জামাতসহকারে নামাজ হয় না, সে মসজিদে ইতিকাফ জায়েজ নেই।) ৭. রোজা রাখা।
মসজিদ থেকে বের হওয়ার বিধান :
►ইতিকাফকারী যদি বিনা প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হয় তাহলে তার ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর ইতিকাফের স্থান থেকে যদি মানবীয় প্রয়োজন মিটানোর জন্য বের হয় তাহলে ইতিকাফ ভঙ্গ হবে না।
►মসজিদে থেকে পবিত্রতা অর্জন সম্ভব না হলে মসজিদ থেকে বের হওয়ার অনুমতি আছে।
►বাহক না থাকার কারণে ইতিকাফকারীকে যদি পানাহারের প্রয়োজনে বাইরে যেতে হয় অথবা মসজিদে খাবার গ্রহণ করতে লজ্জাবোধ হয়, তবে এরূপ প্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার অনুমতি আছে।
►যে মসজিদে ইতিকাফে বসেছে সেখানে জুমার নামাযের ব্যবস্থা না থাকলে জুমার নামায আদায়ের প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হওয়া ওয়াযিব এবং আগে ভাগেই রওয়ানা হওয়া তার জন্য মুস্তাহাব।
►ওজরের কারণে ইতিকাফকারী মসজিদ থেকে বের হতে পারে। ছাফিয়্যা রা. থেকে বর্ণিত হাদিস এর প্রমাণ : অর্থাত্ ছাফিয়্যা রাদিআল্লাহু আনহা রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফস্থলে রাসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সাক্ষাৎ করতে এলেন। রাসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে কতক্ষণ কথা বললেন, অতঃপর যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালেন, রাসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও তাকে বিদায় দিতে উঠে দাঁড়ালেন। [সহীহ বুখারী]
►কোন নেকির কাজ করার জন্য ইতিকাফকারীর মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ নয়। যেমন রোগী দেখতে যাওয়া, জানাজায় উপস্থিত হওয়া ইত্যাদি।
►ইতিকাফ-বিরুদ্ধ কোন কাজের জন্য ইতিকাফকারীর মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ নয়, যেমন-ক্রয়-বিক্রয়, স্বামী-স্ত্রীর মিলন ইত্যাদি।
ইতিকাফকারী যা থেকে বিরত থাকবেন : ওজর ছাড়া ইতিকাফকারী এমন কোন কাজ করবেন না যা ইতিকাফকে ভঙ্গ করে দেয়।
ওই সকল কাজ যা ইতিকাফের উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করে, যেমন বেশি কথা বলা, বেশি মেলামেশা করা, অধিক ঘুমানো, ইবাদতের সময়কে কাজে না লাগানো, টেলিফোনে গল্পগুজব করা, বিনা কারণে ইন্টারনেট ব্রাউজ করা, চ্যাটিং করা, মসজিদে অবস্থানরত অন্যান্যদের সাথে হাসি-ঠাট্টা করা, ঝগড়া-ঝাটি করা, অন্যের গীবত করা ইত্যাদি।
ইতিকাফকারী মসজিদে অবস্থানকালে ক্রয়-বিক্রয় করবে না, কেননা নবী রাসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। [মুসনাদে আহমদ] এমনিভাবে যা ক্রয় বিক্রয়ের কাজ বলে বিবেচিত যেমন বিভিন্ন ধরনের চুক্তিপত্র, ভাড়া, মুদারাবা, মুশারাকা, বন্ধক রাখা ইত্যাদি। কিন্তু যদি মসজিদের বাহিরে এমন ক্রয়-বিক্রয় হয় যা ছাড়া ইতিকাফকারীর সংসার চলে না তবে তা বৈধ বলে বিবেচিত হবে।
মসজিদে বায়ু ত্যাগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে গ্যাসের সমস্যা থাকলে বাথরুমে গিয়ে তা ত্যাগ করা উচিত।
☼☼ ইতিকাফকারীর জন্য যা অনুমোদিত
● ইতিকাফকারীর জন্য মসজিদে পানাহার ও ঘুমানোর অনুমতি আছে। এ ব্যাপারে সকল ইমামদের ঐকমত্য রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত; কেননা আল্লাহর প্রতি একাগ্রচিত্ত এবং একনিষ্ঠভাবে মনোনিবেশের জন্য কম খাওয়া কম ঘুমানো সহায়ক বলে বিবেচিত।
● গোসল করা, চুল আঁচড়ানো, তেল ও সুগন্ধি ব্যবহার, ভাল পোশাক পরা, এসবের অনুমতি আছে।
● ইতিকাফকারীর পরিবার তার সাথে সাক্ষাত্ করতে পারবে, কথা বলতে পারবে, কেননা নবী রাসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রীগণ ইতিকাফকালীন তার সাথে সাক্ষাৎ করতেন। কিন্তু সাক্ষাৎ দীর্ঘ না হওয়া বাঞ্ছনীয়।
●||● ইতিকাফের শর্তসমূহ ●||●
♠ মাসয়ালা: শরিয়তে সংজ্ঞায় মতে যেটাকে মসজিদ বলা হয়, সেখানে অবস্থান করা। তবে ইতিকাফের জন্য উত্তম স্থান হলো জুমা মসজিদ। অতঃপর মহল্লার যে মসজিদে নামাজির সংখ্যা বেশি হয়।
♠ মাসয়ালা: সুন্নাত ও ওয়াজিব ইতিকাফে রোজা রাখা।
♠ মাসয়ালা: জানাবাত থেকে পাক হওয়া, অর্থাৎ স্ত্রী সহবাস, স্বপ্নদোষ, মহিলারা মাসিক ও নেফাস বন্ধ হওয়ার পর ওয়াজিব গোসল করে পবিত্র হওয়ার পূর্বে ইতিকাফের জন্য মসজিদে প্রবেশ করা নাজায়েয।
♠ মাসয়ালা: মহিলাদের জন্য মাসিক ও নেফাস থেকে পবিত্র হওয়া। -বাদায়েউস সানায়ে: ২/১০৮
||●●|| ইতিকাফকারীর করণীয়-বর্জনীয় কাজসমূহ
♠ মাসয়ালা: ফরজ ওয়াজিব ও সুন্নতসমূহ সঠিকভাবে আদায় করার চষ্টো করবে এবং বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াতসহ নফল আমল করার চষ্টো করবে। রাতে যতক্ষণ পর্যন্ত আগ্রহ থাকবে ততক্ষণ কোরআন তেলাওয়াত, জিকির এবং নফল নামাজে ব্যস্ত থাকবে। শুয়ে যেতে মনে চাইলে সুন্নত মোতাবেক কিবলামুখী হয়ে শুয়ে যাবে। দোয়া-মোনাজাতসহ জীবনের সব গোনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে এবং নিজের যাবতীয় নেক উদ্দেশ্যসমূহ পূরণের, উম্মতের হেদায়েতের এবং সব ধরণের ফেতনা থেকে হেফাজতের দোয়া করবে।
♠ মাসয়ালা: আর কদরে ফলিজলত লাভের নিমিত্তে বেজোড় রাতসমূহে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সব ধরণের নফল আমল করার চষ্টো করবে।
♠ মাসয়ালা: ইস্তেগফার, দরূদ-শরিফ এবং সকালবেলার মাসনূন দোয়াসমূহ পাঠ করবে।
♠ মাসয়ালা: কাজে-কর্মে, কথা-বার্তায়, উঠা-বসায় অন্যের কষ্টের কারণ হতে পারবে না। মসজিদ পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
♠ মাসয়ালা: কিছু কাজ আছে যা করা সর্বাবস্থায় হারাম। তবে ইতিকাফ অবস্থায় করা আরো মারাত্মক যেমন, পরনিন্দা, চোগলখুরি, মিথ্যা বলা, ঝগড়া করা, কাউকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেওয়া, অন্যের দোষ-ত্রুটি তালাশ করা, কাউকে অপমানিত করা, অহংকার, হিংসা-বিদ্বেষ ইত্যাদি। এসব কাজ পরিপূর্ণভাবে পরিহার করা।
♠ মাসয়ালা: মনে রাখতে হবে যে, মসজিদে বিনা প্রয়োজনে দুনিয়াবী কথাবার্তা বলার দ্বারা নেকি নষ্ট হয়ে যায়।
♠ মাসয়ালা: ইতিকাফকারীর জন্য কোনো প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ডেকে দ্বীনি কথাবার্তা ছাড়া সাধারণ কথাবার্তা বলা মাকরূহ। আর আড্ডার মজলিস জমানো নাজায়েয।
♠ মাসয়ালা: ইতিকাফ অবস্থায় রচনা উপন্যাস এবং নোংরা বই-পুস্তক পড়া অবশ্যই পরিহারযোগ্য। মোবাইলে ইন্টারনেটে গুনাহের উপকরণসমূহ থেকে অবশ্যই বঁেচে থাকবে। ইতিকাফ ইবাদতের জন্য। ইবাদত বিনষ্টের জন্য নয়।
♠ মাসয়ালা: মসজিদের ভেতরে বিনিময় নিয়ে কোনো কাজ করা জায়েয হবে না। এটা দ্বীনি কাজ হোক বা দুনিয়ার কাজ হোক।
♠ মাসয়ালা: মালামাল উপস্থিত করে মসজিদে ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবসা করতে পারবে না, হ্যাঁ, প্রয়োজনে মালামাল উপস্থিত না করে ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে।
পরিশেষে বলা প্রয়োজন, অন্যান্য নবী-রাসুলদের উম্মতগণ দীর্ঘায়ু লাভ করে শত শত বছর ইবাদাত-বন্দেগীতে লপ্তি থাকত। কিন্তু আমাদের হায়াত কম যার কারণে শত শত বছর বেঁচে থেকে ইবাদত করার কোনো সুযোগ আমাদের হওয়ার নয়। তাছাড়া লাইলাতুল ক্বদরের রজনী যদি আমরা পেয়েই যাই; তবে হাজার মাসের ইবাদতের সমপরিমাণ ইবাদত একরাত্রিতেই সম্ভব। সুতরাং আমরা লাইলাতুল ক্বদরের জন্য ইতিকাফ করবো। লাইলাতুল ক্বদরের অর্জন ইতিকাফের মাধ্যমেই পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর এই জন্যই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইতিকাফের জন্য জোর তাগিদ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ আমাদের যথাযথভাবে ইতিকাফ পালন করার সেৌভাগ্য দান করুন, আমিন।
(সাইফউদ্দিন মো: মছিহ রানা ● সিনিয়র সাব এডিটর ☼ বাংলাদেশ প্রতিদিন )