রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব :
২০১৪ সালের এক বিকেলে কুষ্টিয়া শহরের থানার মোড়ের টিএন্ডটি গেটের সামনে লতিফ ভাইয়ের চা এর দোকানে বসে আছি। এমন সময় মাহমুদ হাসান বর্তমানে সাংবাদিক ইউনিয়ন কুষ্টিয়ার সাধারণ সম্পাদক একজন সুন্দর, মিষ্টভাষী, বিনয়ী এক যুবককে সাথে এনে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললো ভাই এ আমার বন্ধু। সাংবাদিকতা করতে চায়। আমি জিজ্ঞেস করলাম তোমার নাম কি? মিষ্টি হেসে বললো, রুবেল, হাসিবুর রহমান রুবেল। তখন মাহমুদ দৈনিক পদ্মা গড়াই পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। ওকে বললাম পদ্মা গড়াইয়ে ওকে নিয়ে নাও। শুরু হলো রুবেলের সাংবাদিকতার হাতেখড়ি। ক’দিন পর বললো ভাই, আমি ঢাকার একটা দৈনিকের জেলা প্রতিনিধি হয়েছি। জিজ্ঞেস করলাম কোন পত্রিকা? বললো দৈনিক সন্ধ্যাবাণী। বললাম গুড, এগিয়ে যাও। এরপর স্থানীয় একটি দৈনিকের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও সর্বশেষ নাইমুল ইসলাম খান ভাইয়ের সম্পাদনায় দৈনিক আমাদের নতুন সময় পত্রিকার কুষ্টিয়া প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করছিলো। মাঝে মধ্যে দেখা হতো। স্বভাবসুলভ ভাবে বলতো ভাই কেমন আছেন? ভাবী ভালো আছে ভাই? বলতাম বাসায় এসো। যাবোনি ভাই উত্তরে বলতো রুবেল। রুবেলের নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ শুনে মনে মনে ভাবলাম ওর মত বিনয়ী, ভদ্র ছেলে যার হাসিতেই যে কেউ মুগ্ধ হবে ওর কেন এমন হবে? ওর কোন শত্রু থাকতে পারে এটা ভাবতেও পারিনি। কুমারখালী থেকে সাংবাদিক শাহীন ভাই গতকাল ফোন দিয়ে বললো ভাই যদুবয়রা ব্রীজের নীচে একটা লাশ পাওয়া গেছে, সবাই বলছে ওটা নাকি রুবেলের লাশ। আমি আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ করে বললাম, আল্লাহ্ ওটা যেন রুবেল না হয়। ও বেঁচে থাকুক। ও জীবিত ফিরে আসুক।
আমি ও সেক্রেটারি সোহেল, মাহমুদসহ ১৫/২০ জন প্রাইভেট ও মটর সাইকেলে রওয়ানা হলাম যদুবয়রা ব্রিজের দিকে। মাঝপথে কারা যেন বললো কুমারখালি থানা লাশ উদ্ধার করে কুষ্টিয়ায় মর্গে পাঠিয়েছে। আবার ফিরে এলাম। এসে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল করলাম।
বারবার চোখে ভাসছে রুবেলের হাসিমাখা চেহারা। খুব কষ্ট হচ্ছে। কেন সেদিন রুবেলকে সাংবাদিকতা পেশায় নিরুৎসাহিত করলাম না? কেন ওকে এই ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় আনলাম। আজ ওর মায়ের কোল খালি হলো, স্ত্রী বিধবা হলো, সন্তান এতিম হলো! কতকষ্টে চলে যেতে হলো এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে। সাংবাদিকতা পেশায় না এলে এমন নির্মম মৃত্যু হতো না ওর। ছোট ভাই আমাকে ক্ষমা করো। কেন তোমাকে এই পেশায় আনলাম? যে পেশার অর্থনৈতিক, সামাজিক নিরাপত্তা নেই…
লেখক : সম্পাদক দৈনিক আরশি নগর, সভাপতি কেপিসি কুস্টিয়া।
পূর্ববর্তী খবর