ডাঃ শওকত আরা বীথিঃ
সারা পৃথিবী জুড়ে ‘করোনা’ ভাইরাসের আক্রমণের কারণে ভাইরাস এবং ‘ইমিউনিটি’ অর্থাৎ সৃস্টিকর্তাপ্রদত্ত শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে বেশ কিছু জেনেছি। আমরা এটাও জানি এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুই প্রকারের। অর্থাৎ সৃস্টিকর্তা যেসব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উপকরণগুলো আমাদের শরীরে জন্ম থেকেই দিয়ে দিয়েছেন তাকে বলা হয়, Innate immunity আর পরবর্তীতে বিভিন্ন Vaccine প্রয়োগ করে এবং বিভিন্ন রোগে ভুগে যে নতুন নতুন প্রতিরক্ষাবাহিনী আমাদের শরীরে তৈরী হয়, তাকে বলে “Acquired immunity”
বাহির হতে কোন জীবানুর হামলা হলে সাথেসাথে আমাদের শরীরে অবস্থিত প্রতিরক্ষাবাহিনী দেহকে রক্ষা করার জন্য কাজে নেমে পড়ে। এই কর্মক্ষেত্রে নেমে পড়ার বিষয়ে আমাদের মনে হতে পারে এ ব্যবস্থায় কি ব্যুরোক্রেসি অথবা আমলাতন্ত্রের মত ব্যবস্থায় কাজ করে কি না!
বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসনে লালিত এই ব্যবস্থাকে যেমন আমরা কর্মতৎপর এবং দক্ষ ব্যবস্থা বলে জানি তেমনি উত্তরাধিকার সূত্রে একে গর্বের সাথে গ্রহণও করেছি। আর প্রশাসন যন্ত্রে এর প্রভাবে নোট নথির ওঠানামার কারণে কত গুরুত্বপূর্ণ কেস্ এর কতপ্রকার পরিণতি হতে পারে সেকথাও আমরা জানি। নোট নথি এবং সিদ্ধান্তের জটিলতাও টানাপোড়েনে কখনও কখনও ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াই সব শেষ হয়ে যেতে পারে। অনেকটা সেই বিখ্যাত উক্তির মতন “ডাক্তার আসিবার পূর্বেই রোগী মরিয়া গেলো”। এই কারণেই বোধকরি সৃস্টিকর্তা বিষয়টি সয়ংক্রিয় অবস্থায় রেখেছেন,কোন আমলাতান্ত্রিক ব্যাবস্থা রাখেন নাই।
যাহোক দেহযন্ত্রের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী শরীরের কোথাও জীবানুর অনুপ্রবেশ এবং ঘাঁটি তৈরীর বিরুদ্ধে গোটা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৎপর হয়ে ওঠে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কেন্দ্রে খবর পৌঁছে যায়। যার ফলে আক্রান্ত স্থানে রক্তপ্রবাহ বেড়ে যায়। আর বিশেষ ধরণের শ্বেতকণিকা দলে দলে দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে লড়াইয়ে নেমে পড়ে। এবং জীবানুগুলোকে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। এইসব প্রক্রিয়ার জন্য ধাপে ধাপে সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয়না। কাজগুলো বিধিবদ্ধ ব্যবস্থারই অংশ হিসাবে এক এক করে ঘটতে থাকে।
যদি আমলাতান্ত্রিক উপায়ে ব্যবস্থা গ্রহনের বিষয় হতো তবে এমনটিও হতে পারত,যেমন ধরা যাক,কোন ব্যক্তির শরীরের মূত্রশয়ে একিউট ইনফেকশান দেখা দিয়েছে অর্থাৎ ঘটনাস্থল “ মূত্রাশয়” ( Urinary tract)।এবং “ ই কোলাই নামক এক প্রকার জীবানুর দল সেখানে জমায়েত হয়েছে এবং মূত্রাশয়ের অন্যান্য অংশে আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরপর সংগে সঙ্গে খবর চলে গেল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দপ্তরে। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মন্তব্যে জানালো যে কেন্দ্রীয় অস্থমজ্জা কমিশনের কাছে শ্বেতকণিকা সৈন্যদল পাঠাবার ব্যবস্থার জন্য “ডেসপ্যাচ” পাঠান হয়েছে। এবার কেন্দ্রীয় অস্থিমজ্জা কমিশনের প্রতিক্রিয়ায় জানা গেলো যে আগামীকাল সকাল সাতটায় কেন্দ্র খোলার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এবার কেন্দ্রীয় মস্থিমজ্জা কমিশনের প্রতিক্রিয়ার রিপোর্ট অনুরোধ বার্তা নোট করা হয়েছে। আগামীকাল সকাল সাতটায় কেন্দ্র খোলার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবার স্থায়ী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বার্তা ”ই কোলাই জীবানু বিনা বাধায় মূত্রাশয়ে বাসা বেঁধে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে যাচ্ছে। এই আক্রমণের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত কোন কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি এবং শ্বেত কণিকা সৈন্যদলেরও কোন খবর নেই যাই হোক জীবাণুর এ্যান্টিজেন প্রক্রিয়াকরনের জন্য ‘টি’ও‘বি’ লিম্ফোসাইট ব্যুরোর কাছে পাঠানো হচ্ছে। ( চলবে)