গাংনী প্রতিনিধি:
মেহেরপুরের গাংনীর বিয়ে পাগল মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে চারটি মামলা করেছে তার দুই স্ত্রী। যৌতুক, নারী নির্যাতন ও পর্ণোগ্রাফী আইনে মেহেরপুর আদালতে পৃথক চারটি মামলা দায়ের করা হয়। এরমধ্যে যৌতুক মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। মামলার আসামী মিজানুর রহমান বামন্দী ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস আলীর ছেলে। বর্তমানে সে সিঙ্গাপুরে কর্মরত রয়েছে।
মিজানুর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রী মোহাম্মদপুর গ্রামের সোহেলী আক্তার বলেন,প্রথম বিয়ের তথ্য গোপন করে মিজানুর রহমান ২১ সালের গত ৫ সেপ্টম্বর ৫০ হাজার টাকা দেন মোহরে বিয়ে করেন। বিয়ের পর যৌতুক হিসেবে ২লাখ টাকা ও সোনার চেন ও আংটি দেয়া হয়। সংসার চলাকালিন সময়ে আরো ৩ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। যৌতুকের টাকা না দেওয়া মারধর ও নানা ভাবে নির্যাতন করতো। নির্যাতন সইতে না পারার কারনে মেহেরপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে স্বামী মিজানুর রহমান,শাশুড়ী জাহানারা খাতুন,শশুর আব্দুল কুদ্দুস ও ননদ কুসুমের বিরুদ্ধে যৌতুক এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে। মামলা নং ১৫৭ ও ৩৭৮/২১। এর মধ্যে যৌতুক মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করলেও নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা মোস্তফা জামানকে তদন্ত করার নির্দেশনা দেয় আদালত। আসামী পক্ষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে বিবাদীদের অনুকুলে প্রতিবেদন দিয়েছে। বিষয়টি না রাজি দিয়ে আবারো আদালতের কাছে নতুন করে তদন্ত করার আবেদন করেছি।
প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা মোস্তফা জামান বলেন,তদন্তের বিষয়টি মনে নেই দাবি করে টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
সোহেলী আক্তারের আইনজীবি ইব্রাহিম শাহিন গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মিজানুর রহমানের তৃতীয় স্ত্রী বাওট গ্রামের ঝর্না খাতুন বলেন,পূর্বে দুইটা বিয়ের কথা গোপন রেখে মিজানুর রহমার গত ২০ অক্টোবর ২১ সালে তার সাথে পারিবারিক ভাবে ১ লাখ টাকা দেন মোহরে বিবাহ করেন। পরে আমাদের বিয়ের বিষয়টি ২য় স্ত্রী সোহেলী আক্তার জানতে পেরে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করে। মামলাটি মিমাংসার জন্য আমার বাবার কাছে দেড়লাখ টাকা দাবি করে। এরমধ্যে ৫০ হাজার টাকা দেয়া হলেও আরো ১ লাখ টাকার জন্য মারধর ও নির্যাতন করার পাশাপাশি শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে।
এছাড়া ২১ সালের ২৯ নভেম্বর রাতে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলে মোহাম্মদপুর গ্রামের সোহেল চেয়ারম্যানের বাড়িতে আশ্রয় নিই। নির্যাতনের প্রতিকার পেতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মেহেরপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে স্বামী মিজানুর রহমান,শাশুড়ী জাহানারা খাতুন,শশুর আব্দুল কুদ্দুস ও ননদ কুসুমের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলা নং সিআর ১৭০/২১। আদালত মামলাটি গাংনী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে তদন্ত করার নির্দেশনা দিয়েছে।
ঝর্না খাতুন আরো বলেন,আমাদের স্বামী স্ত্রীর অন্তরঙ্গ ছবি ও ভিডিও মোবাইলে ধারন করে আমার বড় বোনের মোবাইল ফোনে পাঠায় এবং ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার নামে হুমকি দিয়ে পাঁচলাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। একারনে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে পর্ণোগ্রাফী আইনে মেহেরপুর আদালতে আরো একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ঝর্না খাতুনের আইনজীবি একেএম শফিকুল আলম বলেন, পর্ণোগ্রাফী আইনে মামলাটি সিআইডি ও নারী ও শিশু নির্যাতন মামলাটি গাংনী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে তদন্তের দিয়েছে আদালত।
ঝর্না খাতুন বলেন,পূর্বের একটি বিয়ের তথ্য গোপন করে ৪৫ দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিয়ে করে মিজানুর রহমান। ইতোপূর্বে দৌলৎপুর উপজেলার ডাংমড়কা গ্রামের মিলি নামের এক মেয়ের সাথে প্রথম বিয়ে হয়। বিয়ের পর যৌতুক সহ নানা অত্যাচারের কারনে ডিভোর্জ হয়।
গাংনী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন জানান, ঝর্না খাতুনের মামলাটি তদন্তের জন্য এসেছে। মামলার ১ নং আসামী মিজানুর রহমান সহ অন্য বিবাদীদের নোটিশ দেয়া হয়েছিলো। নোটিশের প্রেক্ষিতে ২২ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার উভয় পক্ষের বক্তব্য নেয়া হয়েছে। তবে মামলার ১ নং আসামী মিজানুর রহমান হাজিরা দিতে আসেনি। মামলাটি দ্রত সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: আব্দুর রাজ্জাক বলেন,হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মামলার ১ নং আসামী মিজানুর রহমান সিঙ্গাপুরে থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।