মেহেরপুর প্রতিনিধি:
তীব্র তাপদহ ও লোডশেডিংয়ে নির্ঘুম রাতে পার করছেন মেহেরপুর জেলার সাধারণ মানুষ। দিনে কিছুটা বিদ্যুৎ থাকলেও রাতে দীর্ঘ সময় ধরে লোডশেডিংয়ের কবলে থাকছে জেলার বেশিরভাগ এলাকা। আর এতেই নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে শহর–গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষকে।
এই তীব্র গরমে একটু স্বস্তির আশায় মাত্র ভরসা হলেও দোকানে মিলছে না কোন চার্জার ফ্যান। স্বরে জমিন ঘুরে দেখা যায় গত দু সপ্তাহে মেহেরপুরের বাজারে সংকট রয়েছে চার্জার ফ্যানের।
কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দুদিন ধরে অধিকাংশ ক্রেতাই রিচার্জেবল ফ্যান চাচ্ছেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারি ফ্যানের অর্ডার আসছে। কুলার, আইপিএস ও সোলার প্যানেলের তুলনায় রিচার্জেবল ফ্যান বিক্রি বেড়েছে। অন্য কোনো বছর এত ফ্যান বিক্রি হয়নি। এতে সরবরাহ সংকট দেখা গেছে, যে কারণে দাম বেড়েছে। তাদের দাবি, ডলারের দাম বাড়ায় আমদানি কমেছে। মার্কেটে এসব পণ্যের সংকট থাকলেও চাহিদা বাড়তি। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় এসব ইলেক্ট্রনিক পণ্যের দাম বেড়েছে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, মার্কেটে পণ্য নেই। আমদানিকারকরা দাবি করছেন, ডলারের বাড়তি দামের কারণে পণ্য আমদানি কমেছে। বাস্তব চিত্র ভিন্ন, অতিরিক্ত গরম, তার ওপর সরকার লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত দেওয়ার পর থেকে আমদানিকারকরা রিচার্জেবল পণ্য বেশি দামে বিক্রি করছেন। তারাও বাধ্য হয়ে বেশি দামে কিনে, বাড়তি দামেই বিক্রি করছেন।
বামুন্দি তাজ ইলেকট্রনিক্স এর স্বত্বাধিকারী জিহাদুল ইসলাম লিটন জানান, তীব্র তাপদহ ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে প্রায় প্রতিটি মানুষের ঝুকছেন চার্জার ফ্যান কেনার জন্য। চাহিদা অনেক বেশি হওয়ায় আমরা ফ্যান বিক্রি করতে চাচ্ছি সেই সাথে চাহিদা তুলনায় অনেক পরিমাণে কম চার্জার ফ্যান এসে পৌঁছাচ্ছে আমাদের হাতে। অনেকের চার্জার ফ্যান না পেয়ে হতাশা নিয়েই বাড়ি ফিরছেন।
গাংনী বাজারের তুহিন ইলেকট্রনিক্স এর স্বত্বাধিকারী তুহিন জানান, দোকানে সিলিং, ফ্যান টেবিল ফ্যান ও চার্জার ফ্যানের চাহিদা বেড়েছে। এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিলিং ফ্যান, চার্জার ফ্যান ওর টেবিল ফ্যানের দাম বাড়িয়েছে। চাহিদা অপ্রতুল হাওয়াই পণ্য ডেলিভারি করতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি।
গাংনী সাজু এন্টারপ্রাইজ এর স্বত্বাধিকারী সিরাজুল ইসলাম সাজু জানান, গত দুই সপ্তাহে কোনো কোনো পণ্যের দাম এক হাজার টাকা বেড়েছে। চায়নার একটি চার্জার ফ্যানের মূল্য ছয় মাস আগে ছিল তিন হাজার টাকা। সেটি এখন কিনতে হচ্ছে সাড়ে ৪ হাজার টাকায়। আমাদের তাহলে কত টাকায় বিক্রি করতে হবে?
তিনি জানান, ডলারের মূল্য বাড়ায় আমদানি কমের অজুহাতে ব্যবসায়ীরা মালামাল দিচ্ছেন না। তাই বাজারে চার্জার ফ্যান, লাইট, কুলারসহ অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক পণ্যের সংকট রয়েছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম, তাই আমাদেরও বেশি দামে কিনে বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে আমাদের লাভও হয় সামান্য।
গাংনী বাজারের ইলেকট্রিশিয়ান আব্দুল হামিদ জানান, গত দুই সপ্তাহে চার্জার ফ্যান মেরামতের চাহিদা তিন থেকে চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা চাহিদা তুলনায় ফ্যান মেরামত করতে হিমশিম খাচ্ছি তাই দিনরাত কাজ করেও কাজ শেষ করতে পারছি না।
মেহেরপুর জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সজল আহমেদ জানান, চার্জার ফ্যানের মূল্য চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রি হচ্ছে এমন অভিযোগ আমাদের কাছে নেই। যদি কোন ভুক্তভোগী আমাদের কাছে অভিযোগ করে তাহলে সেই সকল শোরুমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।