মেহেরপুর প্রতিনিধি
মেহেরপুর সদর উপজেলার কুলবাড়িয়া গ্রামের যুবকরা এলাকার “মুরুব্বিদের মিলনমেলা” নামে ছয় শতাধিক বৃদ্ধের জন্য এক অনন্য ভালবাসার দিন উপহার দিলেন। দিনব্যাপি কুলবাড়িয়া গ্রামের ঈদগাহ ময়দানে বৃদ্ধদের জন্য ব্যবস্থা করেন সকাল ও দুপুরে সম্পুর্ণ খাওয়াদাওয়া। সকালে দুই, চিড়ি, মিষ্টি, বুদিয়া এবং দুপুরে মাংস, ডাল, ভাজি, সবজি ও ভাত। নিজের পায়ে ঠিকমত হাঁটতে পারেন না এমন মুরুব্বিদের জন্য উপহার হিসেবে ক্র্যাস, লাঠি প্রদান করা হয়। “মুরুব্বিদের মিলনমেলা” নামে ওই অনুষ্ঠানে খোশগল্প, কোলাকুলি ও পারস্পারিক আলাপচারিতায় মহা খুশি ওই এলাকার প্রবিণরা।
সকালে নাস্তার পর আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। নির্ধারিত প্যান্ডেলে প্রবিণরা বসে একে অপরের সাথে ভাব বিনিময় করেন তারা। এসময় ফিরে যান শৈশবে ফেলে আসা স্মৃতিময় দিনগুলিতে। সে সময়ের সামাজিক, রাজনৈতীক, অর্থনৈতিক, পড়ালেখা, দুরুন্তপনা করা কোন কিছুই বাদ যায়না আলোচনায়। বিগত সাত বছর ধরে ৩০ টি গ্রামের পাঁচ শতাধিক বৃদ্ধদের জন্য এমন আয়োজন করতে পেরে খুশি কুলবাড়িয়া গ্রামের যুবকরা। বৃদ্ধ বয়সে ফেলে আসা দিনগুলোর সহপাঠি, সহকর্মী, বন্ধু যাদের সাথে সোনালী দিন কাটিয়েছেন তাদের স্মৃতিতে খুঁেজ বেড়ান বৃদ্ধরা। তাই বৃদ্ধদের স্মৃতি হাতড়ানো সোনালী দিনের খবরা খবরের বাস্তব রুপ দিতে এই অনন্য আয়োজন করেন ওই যুবকরা। অয়োজকরাও বৃদ্ধদের একত্রিত করতে পেরে তাদের স্মৃতি রোমন্থনে খুশি হন দোয়া চেয়ে নেন তারা।
আলোচনা চলার সময় সব থেকে কষ্টের মুর্হুত হচ্ছে এক বছর আগেও যাদের সাথে ওই অনুষ্ঠানে খাওয়া দাওয়া করেছেন, খোশ গল্প করেছেন। তাদের অনেকেই সৃর্ষ্টিকতার আহবানে সাড়া দিয়ে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন সেই হিসাব করার সময়। সে সময় অনেককেই ডুকরে ডুকরে কাঁদতে দেখা গেছে। কেউ উচ্চ স্বরে কান্না করতে থাকে আর হিসাব মেলাতে চায় সামনের বছর হয়তো এর মধ্যে অনেককেই আর দেখা যাবেনা। মুরুব্বিরা শেষ বয়সে তাদের সোনালী দিনের স্মৃতিময় দিনগুলোর সহকর্মী, বন্ধু, সহকর্মীদের সাথে মিলনমেলার ব্যাবস্থা করে দেবার জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ দেন ও দোয়া করেন তাদের জন্য।
এলাকার চাঁদপুর গ্রামের অংশগ্রহণকারী মুরুব্বি কুতুব উদ্দীন বলেন, মিলন মেলায় অংশ গ্রহণ করতে পেরে খুব ভাল লাগছে। খাওয়া দাওয়া খুব ভাল হয়েছে। অনেক মুরুব্বিদের সাথে আলাপচারিতা, মতবিনিময় সহ কুলাকুলি করে আনন্দ পেলাম। যুবকরা গ্রামে গ্রামে এরকম আয়োজন করলে আমাদের গর্বে বুক ভরে যেত। মুরুব্বি শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, এই আয়োজনে অংশ নিতে পারা এ এক অন্য রকম অনুভূতি। এক সাথে এত সমবয়সি মানুষের দেখা হওয়া খুবই ভাগ্যের বেপার। তিনি আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞা ও ধন্যবাদ জানান।
মিলন মেলার প্রধান উদ্যোক্তা খাইরুল ইসলাম বলেন, আমরা আমাদের নিজেদের বৃদ্ধা মা বাবার প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাতে তাদের সম বয়সিদেরও একত্রিত করে থাকি। এতে গ্রামের মুরব্বিরা এলাকার অপরাপর ৩০ টি গ্রামের তাদের সম বয়সি মুরব্বিদের সাথে আড্ডায় মেতে ওঠে। এটা এ বছর নিয়ে পর পর ৭ বছর ধরে করা হচ্ছে। আমরা নিজেরাই গ্রামের উদ্যোগি মানুষ নিয়ে মুরুব্বিদের এ মিলন মেলার আয়োজন করি। এ কাজে বাইরের কারো সাথে কোন চাঁদা নেওয়া হয়না। অনুষ্ঠানে ৩০ টি গ্রামের ষাটোর্ধ বৃদ্ধ মানুষকে দাওয়াত করা হয়। বৃদ্ধদের এক যায়গায় করে তাদের জন্য একটা অনন্য ভালবাসার আয়োজন করতে পেরে আমাদের খুব ভাল লাগে। এলাকার বৃদ্ধ মানুষরাও খুব খুশি হয়।
“মুরুব্বিদের মিলনমেলা” অনুষ্ঠানের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আবু তাহের বলেন, অহরহ খবরে ছাপা হয়, শোনা যায় বৃদ্ধ বাবা মাকে রাস্তায় ফেলে দেয়, বয়স্ক নিবাসে রেখে আসে, লাশ নিতে অপারগতা প্রকাশ করে। মনে হয় বৃদ্ধ বাবা-মা তাদের একটু সহানুভূতি আদর ভালবাসা পাবার অধিকার হারিয়ে ফেলেছেন। ভালোবাসা প্রকাশের ধরন বিচিত্র এক একজনের কাছে এক এক রকম। তবে এই ভালবাসার গল্প একটু ভিন্নমাত্রার অকৃত্রিম। গ্রামের যুবকরা এ এক অন্য রকম আয়োজন করে থাকে। অনুষ্ঠানটিতে উপস্থিত হয়ে সমবয়সি মানুষের সানিধ্যে নানা স্মৃতি চারণ আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় শৈশব, কৈশর যৌবন পেরিয়ে পৌড়ত্বের নানা বাস্তবতার দিনগুলিতে।