মেহেরপুর প্রতিনিধিঃ
মেহেরপুরের শিশু কিশোরদের হাতে রয়েছে নামী দামী ব্রান্ডের দ্রুতগামী মোটরসাইকেল। আর এসব যান নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শহর ও গ্রামা লের রাস্তা। ঘটছে দুর্ঘটনা। প্রাণহানী ঘটছে অনেকের। আবার কেউ কেউ পঙ্গু হচ্ছে চীরতরে। তার পরও থামানো যাচ্ছে না ওই সব কিশোরদের। ট্রাফিক পুলিশেরও কোন উদ্যোগ চোখে পড়ে না।
দেখা গেছে, মেহেরপুরে বিভিন্ন সড়ক মহাসড়কে শিশু ও কিশোররা দ্রুত বেগে মোটর সাইকেল চালাচ্ছে। নামী দামী ব্রাণ্ডের এসব মোটর সাইকেলের কোন রেজিস্ট্রেশন নেই। অন্যদিকে চালকদেরও নেই কোন ড্রাইভিং লাইসেন্স। ফলে হরহামেশা দূর্ঘটনা ঘটছে।
গাংনীর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বিভিন্ন ক্লিনিকের তথ্যানুযায়ি গাংনীতে ৬ মাসে ৪১ টি মোটর সাইকেল দূর্ঘটনা ঘটে। এতে দুই জনের মৃত্যু হয়। আহত ও চীরতরে পঙ্গুত্ব বহনকারীরা এখন সংসারের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই জিবন জীবীকার তাগিদে করছে ভিক্ষা বৃত্তি।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত ৩ মে রুয়েরকান্দি মাঠের রাস্তায় মোটর সাইলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আহত হয়ে মৃত্যু হয় ওই গ্রামের কিশোর সবুজ। নতুন পালসার মোটরসাইকেল চালাতে দ্রুত বেগে চালাতে গিয়ে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। কিশোর বয়সে বিয়ে করার পর শশুরবাড়ি থেকে যৌতুক নেয় একটি পালসার মোটর সাইকেল। নব বধুকে নিয়ে দ্রুত বেগে মোটর সাইকেল চালানোর সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দূর্ঘটনায় সে মারা যায়। পঙ্গুত্ব বরণ করেন তার স্ত্রী জুলেখা।
বেশ কয়েকজন অভিভাবকের সাথে আলাপ কালে তারা জানান, কিশোররা দেখা দেখি মোটর সাইকেলের বায়না ধরে। কিনে না দিলে স্কুল কলেজে যেতে চায় না। এমনকি আত্ম হত্যারও হুমকী দেয়। ফলে বাধ্য হয়ে বাবা মা তাদের আদরের ছেলেকে গাড়ি কিনে দেন। বিশেষ করে প্রবাসীর ছেলেরা মায়ের উপর রাগ দেখিয়ে মোটর সাইকেল কিনে দিতে বাধ্য করে। ছেলের ভবিষ্যত ভেবে অভিভাবকরা ছেলের শখ পুরুণ করেন। এতে হিতে বিপরীত হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুজন অভিভাবক জানান, তাদের সন্তানরা লেখাপড়ায় বেশ ভাল ছিল। মাস ছয়েক আগে একটি বেসরকারী বিদ্যালয়ে পড়ার সময় একটি রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। গাড়ি কিনে না দিলে সমস্যা আছে বলে জানায়। এক রকম চাপাচাপিতে গাড়ি কিনে দেয়া হয়। এখন পড়াশোনা বাদ দিয়ে ওইসব ছেলেদের সাথে রাত দিন ঘোরাফেরা করে। গভীর রাতে রাড়ি ফেরে। দুপুর পর্যন্ত ঘুমায়। ভয়ে কিছু বলা সম্ভব হয় না। শিশু কিশোররা এখন অনেকটা ভয়ঙ্কর।
স্থানীয় অনেকেই জানান, অপ্রাপ্ত বয়স্ক এসব ছেলেরা যেভাবে রাস্তায় গাড়ি চালায় তাতে পথচারীরা নিরাপদ নয়। আঁকা বাঁকা ও দ্রুত গাড়ি চালানোর কারণে রাস্তায় চলাচল কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার ওই সব মোটর সাইকেলে রেডিয়াম লাইট ও ইমার্জেন্সী হর্ণ লাগিয়ে পথচারীদেরকে বিব্রতকর পরিস্থিতে ফেলে। অনেকেই সাইরেন বাজিয়ে পথ চলে। এক মোটর সাইকেলে তিনজন চড়ে স্কুল কলেজে আসে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষও কোন বিধি নিষেধ আরোপ করে না।
কেউ কেউ জানান, মোটর যান কেনার সময় ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখানো বাধ্যতা মূলক ছিল। এখন আর সেটি দেখা যাচ্ছে না। রাস্তা ঘাটে পুলিশও কোন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না। এ ছাড়াও অল্প টাকা জমা দিয়ে কিস্তিতে মোটর সাইকেল পাওয়া যাচ্ছে। ফলে কিশোররা এসব মোটর সাইকেল কিনছে আবার তা চড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রাস্তা ঘাটে। এরা বিভিন্ন স্থানে দাঁড়িয়ে থেকে মেয়েদেরকে উত্যক্ত করে কিংবা কোন ঘটনা ঘটিয়ে সহজে পালিয়ে যায়।
বেশ কয়েকটি তেল পাম্পের ম্যানেজারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কিছু আগেও কিশোরদের এবং হেলমেট ছাড়া কাউকে তেল দিবেন না মর্মে সাইন বোর্ড দেয়া হয়। তারা পাম্পের তেল না নিয়ে লোকাল তে ব্যবসায়িদের কাছ থেকে তেল কিনে। এতে ব্যবসায় ধ্বস নামে। বাধ্য হয়ে সকলকেই তেল দেয়া হয়।
মেহেরপুর ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর ফেরদৌস জানান, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন রোড ট্যাক্স, চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়মিত পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। মামলাও দেয়া হচ্ছে সেটা কিশোর হোক না হয় বয়স্ক হোক। ইদানিং কিশোরদের হাতে দামী ব্রান্ডের দ্রুতগামী মোটর সাইকেল রয়েছে । এরা অভিভাবকদেরকে ইমোশনালী ব্লাক মেইল করে মোটর সাইকেল কিনছে। একমাত্র অভিভাবকদের সচেতনতায় পারে কিশোরদের সুপথে ফেরাতে। সম্প্রতি বেশ কিছু মোটর যান আটক করা হয়েছে এবং ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতা অব্যাহ রয়েছে বলেও জানান তিনি।