মেহেরপুর জেলা কারাগারের ভেতরের ক্যান্টিনে চলছে তুঘুলি কান্ড। এখানে বাইরের থেকে ৪ থেকে ৬ গুন বেশি দামে পণ্য বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ক্যান্টিন ম্যানাজার কারারক্ষী শামিম হোসেনের (কারারক্ষী নাম্বার ৪২৯৮০)।
জানা গেছে, সরকারি নিয়স অনুযায়ী ক্যান্টিনে এসব মালামালে শতকরা ১২℅ মূল্য বেশি নেওয়ার কথা। কিন্তু ক্যান্টিন ম্যানাজার শামীম হোসেন ৪ থেকে ৬ গুন বেশি দামে পণ্য বিক্রি করে থাকেন। আসামিদের পরিবার থেকে খাবার সামগ্রী বা শীতের পোশাক দিতে হলেও ১শ টাকা করে দিতে হয় শামীম হোসেনকে। না দিলে কাপড় ঢুকতে দেওয়া হয় না এমনই অভিযোগ আসামির স্বজন ও জেল ফেরত আসামিদের। আবার আসামিদের জন্য তার পরিবার থেকে পাঠানো টাকাও (পিসির টাকা) হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। টাকার বিষয়ে আসামিরা চাপা চাপি করলে রশিদ নিয়ে আসর জন্য বলা হয়। কিন্তু টাকা জমা দেওয়ার রশিদ তো বাড়ির লোকজনের কাছে থাকে।
বিভিন্ন মামলায় কারাবাস করে জামিনে বের হওয়া একাধিক আসামির সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে। তারা জানিয়েছেন, কারা কর্তৃপক্ষ ক্যান্টিন থেকে প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করে বন্দিদের কাছে অতিরিক্ত মূল্যে খাদ্যপণ্য বিক্রি করে। জেল সুপার ও জেলার কে ম্যানেজ করেই গড়ে তুলেছে ক্যান্টিনের সিন্ডিকেট। কিন্তু প্রতিবাদ করার উপায় নেই। প্রতিবাদ করলেই হতে হয় নির্যাতনের শিকার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আসামির সাথে কথা বলে জানা গেছে কারাগারে গিয়ে সব খাবার সামগ্রী কয়েকগুন বেশি দামে ক্রয় করতে হয় তাদের ।
তবে কারাগারের বাইরে এসব ঘটনা সহসা প্রকাশ করে না কেউ। কারণ বেশির ভাগ হাজতির নামে একাধিক মামলা তাই বার বার যেতে হয় কারাগারে। আর কারাগারে গেলেই যেকোন উপায়ে তার কাছে মাদক রেখে চালাবে অমানবিক নির্যাতন। কারাগারের মধ্যে মানুষ নিরাপদ থাকার কথা থাকলেও অনেক অসহায়। বাহির থেকে কিছুই বোঝার উপায় নেই। কারাগারে খাবার দেওয়া হয় তবে তা মানসম্মত না। সপ্তাহে দুই দিন মাংস ও বাকী দিনগুলোতে দেওয়া হয় মাছ। ছোট্ট এক টুকরো মাংস যা দেখলে মনে হয় লটপটি। আর বাকী দিনগুলোতে এক পিস পাঙ্গাস মাছ ভাজি তাও একবেলা। পাঙ্গাস মাছের পরিবর্তন হয়না।
জেল থেকে মুক্তি প্রাপ্ত আসামি রুবেল( ছদ্দ নাম) বলেন, আমি যখন কারাগারে ছিলাম তখন আমার বাড়ি থেকে ১ কেজি ছাগলের গোশত ও ১ কেজি গরুর গোশত পাঠিয়েছিল। এই দুই কেজি গোশত শুধুমাত্র রান্না করা বাবদ ক্যান্টিন বিল দিতে হয়েছে ১ হাজার ৫শত টাকা। পরে টাকা না থাকায় ছাগলের গোশত দিয়ে দিতে হয়েছে ক্যান্টিন ম্যানেজারকে।
বাধ্য হয়ে অনেককেই খাবার কিনে খেতে হয়। এক কেজি ব্রয়লার মুরগির বতর্মান বাজার মূল্য দেড়শ টাকা হলেও কারাগারের ক্যান্টিনে এক কেজি ব্রয়লার মুরগি রান্না করে বিক্রি হয় ৪শ টাকায়।
গরুর মাংসের দাম রাখা হয় প্রতিকেজি ১২শ টাকা। কাঁচা মরিচ ৩শ টাকা কেজি, পেঁয়াজ ৩শ টাকা কেজি, রয়েল সিগারেট ১ প্যাকেট ৬০ টাকা, ডারবি সিগারেট ১ প্যাকেট ৫৫ টাকা, এক প্যাকেট গোল্ডলীফ (ছোট) ১৫৫ টাকা, এক প্যাকেট গোল্ডলীফ (বড়) ২৫০ টাকা। গুল ১টা ২৫-৩০ টাকা, নাসির বিড়ি ১ প্যাকেট ২৫ টাকা, দুই টুকরা আলুসহ ১টি ডিম রান্না ৩০ টাকা, ৫০ গ্রাম চায়ের পাতির দাম ১’শ টাকা, স্পীড ৩৫ টাকা, ১শ গ্রাম ঝাল ও ১শ গ্রাম পেঁয়াজ ৬০ টাকা, ২০ গ্রম গোশত দাম ৫০ পঞ্চাশ টাকা, একপিস মাছ ৫০ টাকা। এছাড়াও কয়েদীদের বাড়ির লোকজন স্লিপে টাকা জমা করে গেলেও সে টাকা অধিকাংশ কয়েদির কাছে পৌঁছায় না যদিও পৌঁছায় তা জমা টাকার চেয়েও কম। জামিনে মুক্ত হলেও আলাদাভাবে কমপক্ষে ৫শত টাকা দিয়ে আসতে হয়।
এবিষয়ে জানতে ক্যান্টিন ম্যানাজার কারারক্ষী শামীম হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে শামিম হোসেন কোন মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন আপনি জেল গেটে আসেন। সরাসরি কথা বলেণন। তাছাড়া এবিষয়ে আপনাকে জানাতে হবে কেন। জানতে যদি হয় আমি আমার স্যারকে জানাবো। আপনি আমার স্যারের সাথে যোগাযোগ করেন। শামিম আরও বলেন এবিষয়ে আপনি আমাকে ফোন দিবেন না। ফোন দিলে আপনার নামে মামলা করে দেবো, আপনি আমাকে চেনেন না।
মেহেরপুর জেলা কারাগারের জেলার হাসনা জাহান বিথী জনান, মেহেরপুরে টাটকা সবজি ও তাজা মাছ পাওয়া যায়। সব সময়ই টাটকা খাবার দেওয়া হয়। তবে ক্যান্টিনের বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
পূর্ববর্তী খবর