আশরাফুল নাহার:
নবজাতক শিশু ১০০য মিলিয়ন নিউরনস সেল নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। নিউরন সেল গুলোর মধ্যে প্রতিনিয়ত যোগাযোগের মাধ্যমেই মস্তিষ্ক বিকশিত হয়। জন্মের সময় শিশুর মস্তিষ্কের প্রতিটি নিউরনে সিন্যাপসের সংখ্যা থাকে ২৫০০। শিশুর বয়স ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে প্রতিটি নিউরনে সিন্যাপসে সংখ্যা প্রায় ১৫০০০-এ পরিণত হয়। পুরো প্রক্রিয়ার ফলাফল ভালো হবে না খারাপ হবে তা নির্ভর করে শিশুর পরিবেশ ও পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর। তাই সঠিক বিকাশের জন্য প্রয়োজন পরিবেশের যথাযথ উদ্দীপনায় সাড়া দেওয়ার সুযোগ।
ডিজিটাল মিডিয়ার সাথে আমরা যখন শিশুর পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি তখন তাকে আশেপাশের পরিবেশ থেকে বিমুখ করে ফেলছি। মা ও পরিবারের অন্যদের সাথে যত সরাসরি ও মুখোমুখি ভাব বিনিময় ঘটবে, শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ তত ভালো হবে।
ফোন/টিভি/কম্পিউটার/ট্যাব এগুলো দিকে সরাসরি না তাকালেও শিশু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যেমন: সন্তানকে খাবার খাওয়ানোর সময় যিনি খাবার খাওয়াচ্ছেন তিনি হয়তো টিভি দেখছেন। তখন টিভির শব্দ ও আলোতে শিশুর স্নায়ু উত্তেজিত হতে পারে। এটা শিশুর ঘুম ও মনোযোগ কে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
আবার মা-বাবা সন্তানকে সময় না দিয়ে যদি ডিভাইস গুলোর প্রতি বেশি মনোযোগী হন তাহলে সন্তানদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হতে পারে। ক্রমাগত এই ক্ষোভ শিশুর আচরণে নানা অস্বাভাবিকতা হিসেবে দেখা দিতে পারে।
যে শিশুরা জন্মের পর থেকে স্ক্রীন টাইমে অভ্যস্ত তাদের ডিজিটাল মিডিয়ার প্রতি নির্ভরতা এত বেশি বেড়ে যেতে পারে যে তা আসক্তিতে রূপ নিতে পারে। তখন তার সামাজিক খেলায় পারদর্শিতা, ভাষার বিকাশ ও লেখাপড়ার ক্ষেত্রে মনোযোগ বয়স অনুযায়ী আশানুরূপ নাও হতে পারে।
সর্বোপরি শিশু যত সামাজিক মেলামেশা করবে, খেলা করবে; তত দক্ষ হবে। মানুষকে চিনতে, বুঝতে এবং ভাবের আদান প্রদানে পারদর্শী হয়ে উঠবে। আর যখন শিশু মোবাইল/টিভি/কম্পিউটার/ট্যাব দিয়ে গেম/কার্টুন/বিজ্ঞাপন/গান/বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখছে ও খেলছে তখন তাকে কোন বাস্তব অভিজ্ঞতা, প্রতিযোগিতার ও সহযোগিতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় না। আসলে সামাজিক মেলামেশার ক্ষেত্রে শিশুকে অনেক চেষ্টা করতে হয় যা ডিজিটাল মিডিয়াতে আসক্ত শিশুদের জন্য কষ্টসাধ্য হতে পারে।
আবার অনেক সময় শিশু খেতে চায় না বলে মোবাইল/টিভি/কম্পিউটার/ট্যাব দেখিয়ে খাবার খাওয়ানো হয়।এতে প্রথমত শিশুর খাবার গ্রহণের সাথে একটা শর্ত যোগ হয় আর দ্বিতীয়তঃ প্রতিটি খাবারের যে ভিন্ন স্বাদ, বর্ণ, গন্ধ আছে শিশুরা সেটা না বুঝেই রোবটের মত খাবার গ্রহণ করে। ফলে খাবার প্রতি শিশুর আগ্রহ ও ভালোলাগা তৈরি নাও হতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, বিশ্বের প্রথম সারির ধনকুবের বিল গেটস তার সন্তানদের ১৪ বছর বয়স হবার আগে স্মার্ট ফোন তো দূরের কথা ফিচার ফোনই কিনে দেন নি। অ্যাপেল এর কর্ণধার স্টিভ জবস কখনো তার সন্তানদের আই প্যাড ব্যবহার করতে দেন নি।
যুক্তরাষ্ট্রের শিশু বিশেষজ্ঞদের সবচেয়ে প্রভাবশালী সংগঠন “আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিকস” ২০১৬ সালের শিশুদের সুরক্ষার একটা নীতিমালা প্রণয়ন করে। এতে বলা হয়েছে সব বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে ডিজিটাল মিডিয়ার ব্যবহার সীমিত করা উচিত।
(চাইল্ড থেরাপিস্ট, শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ গাজীপুর)