নিজস্ব প্রতিবেদক :
মেহেরপুরের তিন উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে তামাক। কৃষকরা অধিক লাভের আশায় এ তামাক চাষে ঝুঁকছে। তামাক ও তামাকজাত পণ্য চাষের ক্ষেত্রে সরকারি অনুমোদন নেওয়ার আইনগত বিধান রয়েছে। তবে এ বিধান উপেক্ষা করে অধিক লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছর নতুন নতুন ফসলি জমি তামাক চাষে যুক্ত হচ্ছে। ফলে তামাক চাষি ও তার পরিবারের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে, ফসলি জমির উর্বর শক্তি হ্রাস পাচ্ছে ও জেলায় কমছে ফসলি জমির পরিমাণ।
এদিকে তামাক চাষ নিয়ে উদাসীন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। তাদের কাছে জেলার তামাক চাষের কোনো ধরনের তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।
বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি লিমিটেড, জাপান টোব্যাকো কোম্পানি লিমিটেড, আবুল খায়ের টোব্যাকো কোম্পানিসহ বিভিন্ন বিড়ি, সিগারেট ও জর্দা তৈরির প্রতিষ্ঠানসহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব প্রতিনিধির মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকদের তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করছে। সরকারি কোনোরূপ তৎপরতা না থাকার ফলে কৃষকদের চাষে উৎসাহ জোগাচ্ছে এসব টোব্যাকো কোম্পানিগুলো। মেহেরপুর সদর উপজেলার উজুলপুর মনোহরপুর, কুতুবপুর. রামনগর সহ বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা যায় অধিকাংশ কৃষকই তামাক চাষ করেন। গত বছল যে জমিতে সবজিতে সবুজের সমাহা ছিলো। এে বছর সেজমিতে বিষ বিক্ষে সমাহার।
তামাক চাষি বাবর আলী, কবির, মসুদসহ বিভিন কৃষক অনেকেই জানান, তামাক ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের বীজ, সার, কীটনাশক, ত্রিপল ও কাগজসহ উৎপাদনের যাবতীয় সামগ্রী সরবরাহ করা হয়ে থাকে। আবার তারাই তামাক পাতা কিনে নেয়। মেহেরপুর জেলায় মূলত আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি ও জাপান টোব্যাকো কোম্পানি তামাক চাষে কৃষকদের সহযোগিতা দিয়ে থাকে বলে জানান তারা।তামাক চাষি ফজলুর রহমান জানান, তিনি দীর্ঘ একযুগ ধরে তামাক চাষ করছেন। তামাক চাষে অন্য ফসলের তুলনায় দ্বিগুণ লাভ হয়। তার মতে, এতে শরীরের ও পরিবেশের ক্ষতি হলেও লাভের অংক অনেক বেশি। তাই তামাক চাষ করেন। পাতার আকার ও সংরক্ষণের প্রকারভেদে কোম্পানি দাম কমবেশি নির্ধারণ করে। কোম্পানির লোক ছাড়াও বাইরের থেকে কেউ কেউ এমেও তামাক কিনে নিয়ে যায়।
মেহেরপুর জেলায় তামাক চাষে লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ-অ্যামেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি ও জাপান টোব্যাকো কোম্পানির কেউ বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
মেহেরপুর পরিবেশ কর্মী ডা. আবদুর রউফ জানান, তামাক চাষে জড়িত চাষী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তামাক মারাত্মক নিউরো-টক্সিক ইফেক্ট তৈরি করে। শরীরের দীর্ঘদিন এর প্রভাব থাকে। এ ছাড়া তামাক চাষ পরিবেশ ও প্রতিবেশের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তামাক চাষে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের সার ও কীটনাশক জমির উর্বরতা হ্রাস করে। বাংলাদেশ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী তামাক চাষের পূর্বে অনুমতি নিতে হয়। তবে আমার জানা মতে মেহেরপুরে তামাক চাষের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনুমতি নেওয়া হয় না।
ডা. সজিবুল হক বলে দীর্ঘদিন তামাক চাষে যুক্ত থাকলে ক্যান্সার, পেটের পীড়া, ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমা, চর্ম, বুক ও ঘাড়ে ব্যথাসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এছাড়া তামাক চাষিদের সন্তানদের ‘গ্রিন টোবাকো সিনড্রোম’ নামে এক জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা থাকে।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, তামাক চাষের বিষয়ে সরকারিভাবে তাদের কোনো নির্দেশনা নেই। তবে তামাক চাষ রোধে গণসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি সরকারেরও ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।