প্রথম রাজধানী:
সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেল হত্যার প্রতিবাদ ও হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে কুস্টিয়ার স্থানীয় সাংবাদিকরা । পরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
কুষ্টিয়ায় সাংবাদিক হাসিবুর রহমান ওরফে রুবেল হত্যার ঘটনায় করা মামলায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এতে করে জেলার সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন সাংবাদিকেরা।
বুধবার বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ‘সর্বস্তরের সাংবাদিকে’র আয়োজনে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
কুষ্টিয়া এডিটরস ফোরামের সভাপতি মজিবুল শেখের সভাপতিত্বে ওই প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক ইউনিয়ন কুষ্টিয়ার সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব, কুষ্টিয়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বাচ্চু। এ সময় রুবেল হত্যার বিচারের দাবিতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, পুলিশ বলছে অগ্রগতি আছে কিন্তু এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারিনি পুলিশ। পুলিশ ব্যর্থ ‘জজ মিয়া’ নাটক তৈরি করছে। স্বাধীনতা পরবর্তীতে এই প্রথম কুষ্টিয়ায় সাংবাদিক হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ৪ দিন আগে সাংবাদিক রুবেলে নিঁখোজ হন। পুলিশ তাকে জীবিত উদ্ধার করতে পারেনি। এই দায় পুলিশ এড়াতে পারে না। প্রতিদিন কুষ্টিয়ায় হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটছে। এবার সাংবাদকর্মী খুনের ঘটনা ঘটলো। হত্যকারীদের গ্রেফতার করতে না পারলে কাফনের কাফন বেধে আন্দোলনের মাধ্যমে কুষ্টিয়া শহরকে অচল করে দেয়ার ঘোষণা দেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। সাংবাদিক রুবেল হত্যার ঘটনার মামলাটি পিআইবির কাছে হস্তান্তর করার জন্য অনুরোধ জানান সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।
পরে সাংবাদিক রুবেল হত্যার প্রতিবাদ ও হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেয় সাংবাদিক নেতারা।
এ বিষয়ে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান–১২ (র্যাব) এ হত্যা মামলার ছায়া তদন্ত করছে। জানতে চাইলে র্যাব–১২ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার ইলিয়াস খান বলেন, ‘যেকোনো সময় এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে পারব। কারণ আমরা ঘটনার সাথে জড়িত অপরাধীদের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছি।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, ৩ জুলাই রাত নয়টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের সিঙ্গার মোড়ে পত্রিকা অফিসে ছিলেন হাসিবুর। তখন মুঠোফোনে একটি কল পেয়ে অফিস থেকে বের হয়ে যান। এর পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। তাঁর মুঠোফোনটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। এ ঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করে তাঁর পরিবার।
এর চার দিন পর গত বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমারখালী পৌরসভার তেবাড়িয়া এলাকায় নির্মাণাধীন গোলাম কিবরিয়া সেতুর নিচে গড়াই নদ থেকে হাসিবুরের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে হাসিবুর রহমানের চাচা মিজানুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে কুমারখালী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন, পূর্বশত্রুতার জেরে কে বা কারা তাঁর ভাতিজাকে হত্যা করেছে। ৩০২, ২০১, ৩৪ ধারায় মামলায়টি হয়েছে। যার মামলা নম্বর ১২ তারিখ ০৮/০৭/২০২২ ইং।
উল্লেখ্য, সাংবাদিক হাসিবুর রহমান কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং এ ব্লকের হাবিবুর রহমানের ছেলে। রুবেল জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি স্থানীয় দৈনিক কুষ্টিয়ার খবর পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এবং আমাদের নতুন সময় পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি বিএডিসিতে ঠিকাদারি ব্যবসাও করতেন।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, হাসিবুরের চাচা অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। ওসি আরও বলেন, পুলিশ বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে এখনো কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি বলে তিনি নিশ্চিত করেন।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খায়রুল আলম বলেন, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কাজ করা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই প্রকৃত অপরাধীরা আইনের আওতায় আসবে বলে তিনি জানান।