নিজস্ব প্রতিবেদক:
কুষ্টিয়ায় বহুল আলোচিত সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেল হত্যার সাথে জড়িত ইমরান শেখ ইমনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে রুবেলের চাচা মেজর বাদী হয়ে গত ৯ জুলাই কুমারখালী থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ হেড কোয়ার্টার, র্যাব হেড কোয়ার্টার কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ, কাউন্টার টেরিরিজম ইউনিটসহ সব কয়টি এজেন্সি রুবেলের হত্যাকারীদের সানাক্তে মাঠে নামে।
র্যাব কুষ্টিয়া থানাপাড়া এলাকার জুয়েল এবং সোহানকে সন্দেহভাজন আসামী হিসেবে গ্রেফতার করে। সাংবাদিকদের তীব্র আন্দোলনের মুখে বৃহস্পতিবার রাতে কুষ্টিয়া শহরের রাজারহাট থেকে ডিবি পুলিশ ইমরান শেখ ইমনকে গ্রেফতার করে। আসামী ইমন গ্রেফতারের সন্দেহের তীর চলে যায় মিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল আরেফীনের দিকে। আসামী ইমনের সাথে একাধিক ছবি ও ইমন কামারুল আরেফিনের ঘনিষ্ঠ সহচর হওয়ায় সন্দেহের তীর তার দিকে যায় সকলের। মিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন উপজেলার চেয়ারম্যানের পাশাপাশি ঠিকাদারী কাজ করেন। সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেলও ঠিকাদারী করতেন। ঠিকাদারী কাজ নিয়ে দন্ধের সৃষ্টিতে রুবেল খুন হয়েছে বলে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা সন্দেহ পোষন করছে। তবে কামারুল সরকার দলীয় প্রভাবশালী নেতা হওয়ার কারণে তাকে পুলিশ স্পর্শ করতে পারবে কি না এই নিয়ে সাংবাদিক নেতাদের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। তবে গ্রেফতার হওয়া ইমরান শেখ ইমন মিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুলের ঘনিষ্ঠ সহযোগি। কামারুল কখনও ইমনকে ফুল দিয়ে বরণ করছেন কখনও মিষ্টি খায়াচেছন এমন ছবি এখন সবার হাতে হাতে। তবে কামারুল আরেফিন বলছেন ইমন যুবলীগ নেতা এবং সেই সুবাদে তার সঙ্গে সম্পর্ক তার। যদিও যুবলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম বলছেন ইমরান শেখ ইমনের যুবলীগের কোন পদ -পদবী নেই। মিছিলে অনেকের সাথে এসে থাকতে পারে। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের চরমপন্থী অধ্যুষিত এলাকা কুষ্টিয়া। এখনও চরমপন্থীরা কুষ্টিয়ার ঠিকাদারী কাজ নিয়ন্ত্রন করে। সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেল বিএডিসি সহ অন্যান্য দপ্তরে ছোট ছোট কাজ করতেন। সূত্র বলছে, গত জুনে তিনি বিগত অর্থ বছরে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সৈকত এন্টারপ্রাইজ কত টাকার কাজ করেছে তার হিসেব চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে কুষ্টিয়ার সরকারী দপ্তরগুলোতে চিঠি দেয়। সৈকত এন্টারপ্রাইজের মালিক চরমপন্থী সংগঠন গণমুক্তিফৌজের প্রধান আমিনুল ইসলাম মুকুল। কেউ হুমকি দিয়েছিলো কিনা তার পরিবারের পক্ষ থেকে জানাতে পারেনি। তবে রাত ১০ টার পরে তিনি আর বাড়ীর বাইরে থাকতেন না। ইমরান শেখ ইমন গ্রেফতার হওয়ার পর উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিনের ঠিকাদারী কাজ দেখাশুনা করা ছেউড়িয়া এলাকার মিলন গা ঢাকা দেয় বলে জানিয়েছেন ছেউড়িয়ার স্থানীয়রা।
শুক্রবার কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, রুবেলের সর্বশেষ মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া গেছে ছেউড়িয়ায় একটি তিলেখাঁজা কারখানার পাশে। ওই তিলে খাঁজা কারখানার পাশে মিলনের বাড়ি এবং গড়াই নদী। সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেল নিখোঁজ হন ৩ জুলাই। ৭ জুলাই কুমারখালীতে গড়াই নদীর ওপর নির্মানাধীন যদুবয়রা সেতুর নিচ থেকে তার লাশ উদ্ধার হয়। পুলিশ বলছে, ছেউড়িয়া মন্ডলপাড়ার গড়াই পাড়ে তার সর্বশেষ মোবাইল নেটওয়ার্ক। আর লাশ পাওয়া গেছে কুমারখালীর গড়াই নদীতে।
ছেউড়িয়াতে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে মনে করছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। এদিকে কামারুল আরেফিনের দক্ষিণ হস্তখ্যাত ইমরান শেখ ইমনকে এই হত্যার ঘটনার খুনী হিসেবে পুলিশ চিহিৃত করেছে।
ইমরান শেখ ইমন গ্রেফতার হওয়া ও কামারুল আরেফিনের ম্যানেজার খ্যাত মিলন পলাতক থাকায় সন্দেহের তীর এখন উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিনের দিকে । মিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায় তিনি একাধিক হত্যা সহ অসংখ্য মামলার এজাহার নামীয় আসামী। কুষ্টিয়া- ১ আসনের সংসদ সদস্য আফাজ উদ্দিনের বাড়িতে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে ২ জন মারা যান। ওই মামলার আসামী হন কামারুল আরেফিন। পরে সিআইডির কাছে মামলা গেলে সম্পূরক চার্জশীট থেকে বাদ পড়েন কামারুল আরেফিন। মিরপুরে যুবলীগ কর্মী শাহাবুদ্দিন আহমেদ হত্যা মামলারও প্রধান আসামী কামারুল আরেফিন। হাট-ঘাট দখল, টেন্ডারবাজি খুন এমন কোন অভিযোগ নেই যা কামারুল আরেফিনের বিরুদ্ধে নেই। এক অদৃশ্য শক্তিতে প্রতিবারই কামারুল আরেফিন মামলা থেকে বেঁচে যান। এব্যাপারে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল আলম বলেন, সব দিকে লক্ষ্য রেখে মামলার তদন্ত করা হচেছ। মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা নৌপুলিশ। জেলা পুলিশ তদন্ত করেছে। পুলিশ সুপার জানান, তিনি নিজে মামলার তদন্ত দেখভাল করছেন যেই এর সাথে জড়িত থাকুক না কেন তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। সর্বস্তরের ব্যানারে আন্দোলনকারী কুষ্টিয়া এডিটর ফোরামের সভাপতি মজিবুল শেখ বলেন, হত্যাকারী যেই হোক আমরা তাকে আইনের আওতায় দেখতে চাই। কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব কেপিসি ও সাংবাদিক ইউনিয়ন কুষ্টিয়ার সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব বলেন, পুলিশ বলছে লেখনীর কারণে তিনি খুন হননি। তাকে হত্যা করা হয়েছে ব্যক্তিগত কারণে। যে কারণেই রুবেল খুন হোক না কেন যেহেতু হাসিবুর রহমান রুবেল একজন সাংবাদিক সেহেতু তার হত্যার মাষ্টারমাইন্ডের গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলনের মাঠ থেকে ফিরবো না। আগামী আরো কঠিন কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। প্রসঙ্গত সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেল কুষ্টিয়ার থেকে প্রকাশিত দৈনিক কুষ্টিয়ার খবর পত্রিকার
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক আমাদের নতুন সময় পত্রিকার কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন।
সাংবাদিক রুবেল হত্যা সন্দেহের তীর উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন’র দিকে
পূর্ববর্তী খবর