প্রথম রাজধানী:
মেহেরপুরের মাটিতে চাষ হচ্ছে একাঙ্গী ফসল। প্রতি বিঘা জমিতে ২০-২৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে বছর শেষে ১ লাখ ২০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করছে চাষীরা। চাষীরা জানিয়েছেন, লাভজনক হওয়ায় দিন দিন একাঙ্গীর চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখানকার কৃষকের উৎপাদিত ফসলটি চিন, ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়াসহ যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
একাঙ্গী দেখতে অনেকটা আদার মতো। শুঁকনো বা কাঁচা একাঙ্গী রান্নায় মসলা হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এটি রান্নায় সুগন্ধ যোগ করে এবং ভিন্ন স্বাদ আনে। মাছ, মাংস, রোস্ট, রেজালা, বিরিয়ানি ইত্যাদি খাবারে একাঙ্গী ব্যবহার করা হয়। এর ফুলও কোন কোন দেশে খাবার হিসাবে গ্রহণ করেছে। থাই এবং চাইনিজ রান্নাতে এই মশলা ব্যবহারের ব্যপকতা রয়েছে। এর সৌরভের জন্য মাছ শিকারে গ্রামে-গঞ্জে এটি প্রায়ই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এর ফুল থেকে সুগন্ধি তেল এবং রঙ উৎপাদন হয়, কাঁচা একাঙ্গী হাঁস- মুরগীর খাদ্য। এছাড়াও এর ওষধি গুনাগুন অনেক। এটি রক্ত বিশুদ্ধ করে, ঠান্ডাজনিত রোগব্যধি প্রতিরোধ করে, গলা ব্যথা, মাথা ধরা দূর করে। প্রাচীন চিকিৎসকগণ দেহের মচকানো অংশ ভাল করতে এই মসলাটি ব্যবহার করত। ডায়রিয়া, পেটের অসুখ নিরাময়ে এর দক্ষতা রয়েছে, একাঙ্গীর চা দেহের জড়তা কাটিয়ে কর্মমুখি হতে এবং কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়াতে সহায়তা করে। অ্যাজমা রোগীর আরাম এবং নিরাময়ে এই মশলাটি ব্যবহার করা হয়। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, রক্তে চিনির মাত্রা সঠিক রাখে, লিভার সুস্থ রাখে এবং মানিসিক অবসাদ দূর করে। কানের ব্যথা বা শারীরিক আঘাত জনিত ব্যথা কমাতেও একাঙ্গী কাজে লাগে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কাছে একাঙ্গী চাষের সঠিক হিসেব না থকলেও চাষীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ি মেহেরপুর সদর উপজেলার সবজী গ্রাম ক্ষ্যাত শোলমারী, ঝাউবাড়িয়া, নওদাপাড়া, গোপালপুর ও গাংনীর বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ৫ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে একাঙ্গী। স্থানীয়ভাবে বিক্রি কম হলেও পার্শ্ববর্তি কুষ্টিয়া জেলার ফড়িয়ারা এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছে একাঙ্গী।এর পর তারা সেটা প্রক্রিয়াজাত করনের পর দেশে ও দেশের বাইরেও বিক্রি করছে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার ঝাউবাড়িয়া, গ্রামের মাঠে স্থানীয় কৃষক ইয়াদুল প্রায় ৫ বছর ধরে একাঙ্গীর চাষ করছেন। ভালো লাভ পাওয়ায় তিনি দিন দিন চাষ বৃদ্ধি করছেন। আশেপাশের অনেক কৃষক তাকে দেখে একাঙ্গী চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। গোপলপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল বাকি জাননা, প্রতি বিঘা জমিতে একাঙ্গী চাষ করতে বীজ, সার, পানি, লেবারসহ প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। চৈত্র-বৈশাখ মাসে জমি প্রস্তুত করে একাঙ্গীর বীজ রোপণ করতে হয়। হালকা পানি দিয়ে জমি রসালো রাখতে হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বছরের মাথায় প্রতি বিঘা জমি থেকে ৮০/১০০ মণ একাঙ্গী পাওয়া যায়।
মেহেরপুর সদর উপজেলার শোলমারী গ্রামের শিক্ষক মাহাবুব রহমান বলেন, ব্যবসায়ীরা তার ক্ষেত থেকে ১৮শ’ থেকে ২ হাজার টাকা মণ দরে একাঙ্গী কিনে নিয়ে যান। এতে এক বিঘা জমিতে খরচ বাদ দিয়ে বছরে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা লাভ হয়। গতবছর ২ বিঘা জমিতে একাঙ্গী চাষ করে ভালো লাভবান হই। এরপর থেকে একাঙ্গীর চাষ বেছে নিই। তিনি আরও বলেন, মেহেরপুরে একাঙ্গী চাষের অপার সম্ভাবনা আছে। এতে অর্থনৈতিক ভাবে বেশ লাভবান হওয়া যাবে।
মেহেরপুর সদর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, সাধারণত উঁচু ভিটার জমিতে একাঙ্গী চাষ ভালো হয়। সারাবছর জমি রসালো থাকবে। তবে জমিতে পানি জমে গেলে গাছ মারা যায়। একাঙ্গী চাষে প্রচুর খাদ্য লাগে। তাই একই জমিতে পরপর দুইবার চাষ না করা ভালো। আমাদের দেশে উৎপাদিত একাঙ্গী চিন, ভারত, পাকিস্তাান ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে রপ্তানি হচ্ছে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, আম, পেয়ারা ও মাল্টার বাগানে সাথী ফসল হিসেবে একাঙ্গী চাষ করে কৃষক কয়েক বছরের জন্য বাড়তি সুবিধাও নিতে পারেন। লাভজনক এ ফসলের আবাদ বৃদ্ধিতে আমরা জেলার কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। এছাড়া আমাদের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা একাঙ্গী চাষিদের কাছে গিয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন।
পূর্ববর্তী খবর