ডাঃ শওকত আরা বীথিঃ
বিষয়টি শুধুমাত্র হিজাব বিপ্লব না হয়ে বোরখা ও হিজাব বিপ্লব লেখা উচিত কিনা সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত হতে পারিনি।কারণ বোরখা এদেশে চালু আছে বহুকাল আগে থেকে। তবে হিজাব চালু হয়েছে কোন কোন ক্ষেত্রে বোরখাসহ। আবার কোন ক্ষেত্রে বোরখা ছাড়াই হিজাব পরিধান করতে পছন্দ করছেন অধিকাংশ নারী। যেন হিজাবই প্রধান সজ্জা তার পোষাকের ।
যাহোক বাংলাদেশে নীরবে একটি হিজাব বিপ্লব ঘটে গেছে গত কয়েক বছরে। নারীর পোষাকে এতবড় নীরব পরিবর্তন সত্যি অভূতপূর্ব। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের অভিজাত বিদ্যাপিঠ থেকে অজ পাঁড়াগায়ের সর্বত্র চোখে পড়ছে এই হিজাব।
আজ থেকে শত বছর পুর্বে প্রাচীন বাংলার জনগণ যখন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন, তখন তারা সেটি করেছিলেন দেশের ঐতিহ্যবাহী পোষাকের সংষ্কৃতি টিকিয়ে রেখে। আজ কেন প্রয়োজন হ’ল পোষাকের সংগে হিজাব নামক অংশটি জুড়ে দিয়ে ধর্মীয় পোষাক নাম দেওয়া? এই পরিবর্তন বা বিপ্লবের অর্থ ও তাৎপর্য্য কি? এটা বোধহয় ভেবে দেখার প্রয়োজন আছে। যেসব দেশের নারীরা বোরখাসহ অথবা পোষাকের সাথে শুধু হিজাব পরিধান করেন তারা অধিকতর রক্ষণশীল একথা বলার কি কোন যুক্তি আছে? কারণ হিজাব দিয়ে শুধু মাথা ঢাকার কাজটা হয় কিন্তু পর্দা রক্ষার জন্য শরীরের বাদবাকি অংশের পোষাকের দিকেও যে নজর দেওয়া প্রয়োজন এ বিষয়টি তেমন গুরুত্বের সাথে দেখা হয়না অধিকাংশ ক্ষেত্রে।
অনেক অভিভাবকগণ অবশ্য হিজাব বা বোরখা পরিধান করাকে নিরাপত্তামুলক ব্যবস্থা বলে মনে করেন। কিন্তু সত্যিই কি হিজাব বা বোরখা দিয়ে নিরাপদে থাকতে পারছেন মেয়েরা ?
এদিকে পহেলা ফেব্রুয়ারী বিশ্বব্যাপী হিজাব দিবস পালিত হচ্ছে। নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশী নারী নজমা খানের উদ্যোগে এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশসহ ১৯০ টি দেশে এ দিবসটি পালিত হয়েছে।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে প্রায় বছরদুই পুর্বে “হিজাব নিয়ে কিছু কথা” এই নামে আমি একটি প্রবন্ধ পোষ্ট করেছিলাম। সেখানে আমি ইসলামী পোষাক হিসাবে হিজাব এর গুরুত্ব কতখানি সে বিষয়ে পবিত্র কোরআন শরীফ থেকে আয়াত্ উল্লেখ করে নারীর পোষাক নির্বাচনের বিষয় আলোচনা করেছিলাম। আজ হিজাব নিয়ে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে আলোচনা করতে চাই। কারণ এই হিজাবের একটি বৈশ্বিক মাত্রাও তৈরী হয়েছে। এবং পশ্চিমা দেশসমূহে এই হিজাব পরিধান নিয়ে বেশ কিছু মামলাও হয়েছে কয়েক বছর আগেই। সুতরাং হিজাব শুধু এখন বাংলাদেশের মুসলমান নারীদের বিষয় আর নেই।
আমার পূর্বের নিবন্ধটিতে ২১ শে অক্টোবর২০১৬ তারিখে ঠিকানা পত্রিকায় প্রকাশিত হিজাব ও বোরখার বাজার দুই হাজার কোটি টাকার নামের প্রতিবেদনে উল্লেখিত অনেক বিষয় আলোচনা করেছিলাম। সেখানে উল্লেখ ছিল,বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসাবে দেশে নারীর সংখ্যা,সাত কোটি ৯৩ লাখ এর মধ্যে ১৫ বছরের বেশী বয়সের নারীর সংখ্যা সাড়ে পাঁচ কোটি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও গবেষণার তথ্য বিবেচনায় দেশে বোরখা ও হিজাব ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ। এ পোষাক বাবদ একজন নারী বছরে গড়ে এক হাজার টাকা ব্যায় করলেও দেশে বোরখা ও হিজাবের বাজার দাঁড়ায় দুই হাজার কোটি টাকার বেশী।
রাজধানীর অভিজাত শপিং মল,বসুন্ধরা শপিং মল ঘুরে দেখা যায মার্কেটে একশ’র মত হিজাব ও বোরখার দোকান রয়েছে। এসব দোকানে হিজাব ও বোরখা বিক্রি হয় প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০ হাজার টাকা। কেবল বসুন্ধরা মার্কেটেই বোরখা ও হিজাব বিক্রী হয় বছরে ৫০-৬০ কোটি টাকার। এই তথ্যঅনুযায়ী বুঝতে অসুবিধা হয়না যে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নানারকম ফ্যাশনেবল হিজাব তৈরীকরে। এবং বিভিন্ন জিলা থেকে আমদানী করে বিপুল মুনাফা অর্জন করছে। দেশে হিজাব ও বোরখা বিক্রয়কারী অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান “ইরাণী বোরখা বাজার লিমিটেড” এর স্বত্তাধিকারী মোহাম্মদ আলী বলেন,দেশে হিজাব ও বোরখার চাহিদা বেড়েছে। বিশেষ করেকম বয়সী নারীদের হিজাব বোরখা এখন ফ্যাশনেবল পোষাক হয়ে দাড়িয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের” উইমেন এ্যান্ড জেন্ডার ষ্টাডীজ” বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ডঃ সানজিদা আক্তার বলেন,বর্তমানে পোষাকের ব্যাপারে ধর্মীয় অনুপ্রেরনা এবং আধুনিক ফ্যাশনের মধ্যে একটি সংযোগ ঘটানো হয়েছে।
হেফাজতে ইসলামের যুগ্মমহাসচীব মুফতি ফয়জুল্লাহ্ মনে করেন, মুসলিম প্রধান দেশে বোরখা বা হিজাবের এই বিপ্লব খুবই স্বাভাবিক। জনাব ফয়জুল্লাহ্ সাহেবের সাথে আমিও একমতপোষণ করি । এছাড়া আমাদের দেশের নারীরা ধর্মীয় অনুপ্রেরণায় পর্দার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। পাশাপাশি আধুনিক পোষাকও পছন্দ করে। বর্তমান সময়কার বাজারে হিজাব ও বোরখার ডিজাইনে আধুনিক ফ্যাশনের ছোঁয়া লেগেছে।ফলে এর চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে । (লেখিকা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী )