-মুহম্মদ রবীউল আলম
দু‘জনই সু প্রতিষ্ঠিত কথাসাহিত্যিক, শিক্ষা ব্যক্তিত্ব এবং পারিবারিক জীবনে সফল ও আদর্শ জুটি। হাবিব আনিসুর রহমান কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ (২৭মে ২০০৫ থেকে ২৫সেপ্টেম্বর ২০০৭) এবং স্ত্রী নাসিমা আনিস ঢাকার ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক। তাদের স্থায়ী নিবাস মেহেরপুরের মুজিবনগরের বল্লভপুরে। থাকেন ঢাকার হাতিরপুলের ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে।
হাবিব আনিসুর রহমান। গল্পকার, ঔপন্যাসিক। মেহেরপুরের বল্লভপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন ৬ জানুয়ারি ১৯৫৩ সালে। ১৯৭৫ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এম.এ করার পর তিনি পেশা হিসেবে বেছে নেন অধ্যাপনা। পাবালিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তৎকালিন ‘বাংলাদেশ এডুকেশন সার্ভিস’-এ যোগ দেন ১৯৭৯ সনে। প্রথম কর্মস্থল চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে প্রায় দশ বছর অধ্যাপনা করেন। পরে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ও যশোর সরকারি এম, এম কলেজেও অধ্যাপনা করেন। তিন বছর তিনি কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। স্বেচ্ছাবসর নিয়ে এখন ঢাকাতে বসবাস করছেন। অধুনালুপ্ত সাপ্তাহিক বিচিত্রা ও পাক্ষিক শৈলীসহ বিভিন্জান জাতীয় দৈনিকের সাহিত্য পাতায় লিখে আসছেন নিয়মিত। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থগুলো হলো-গুলেনবারি সিনড্রোম ও অন্যান্য গল্প (২০০২); অষ্টনাগ ষোলচিতি (গল্প গ্রন্থ, ২০০৫); পোড়ামাটির জিলাপি ও অন্যান্য গল্প (২০০৭); বন্দিভূতের ফন্দি (কিশের উপন্যাস, ২০০৮); পক্ষী ও সারমেয় সমাচার (উপন্যাস, ২০১০); পুষ্পরাজ সাহা লেন (উপন্যাস, ২০১১); পেয়ারী বেগমের বাঘবন্দি খেলা (গল্পগ্রন্থ, ২০১২) ভালোবাসেন বই পড়তে ও লিখতে আর সেতার শুনতে।
সাদা রঙের মানুষগুলোর কাছে যে দিনটা-ক্রিসমাস ডে, নতিপোতা গ্রামের মানুষগুলোর কাছে তা শুভ বড়দিন। পঁচিশে ডিসেম্বর নতিপোতার খৃষ্টানদের কাছে কলাগাছই তাদের ক্রিসমাস ট্রি। যদিও চব্বিশে ডিসেম্বর গভীর রাতে এসে বুড়ো সান্তাক্লজ উপহার রেখে যায় না শিশুদের জন্যে, কেউ ক্রিমাস বক্স উপহার দেয় না, তবুও দরিদ্র এসব মানুষগুলোর মধ্যে সেই রাতে পিঠা তৈরির ধুম পড়ে যায়। কে কতো সুন্দর পিঠা বানিয়ে খেতে দেবে বড়দিনে বেড়াতে আসা মেহমানেদের। সকালে রান্না হবে বাড়ির পোষা লাল ঝুঁটিঅলা বড় মোরগ অথবা রাজহাঁসের ঝোল তার সাথে একটু পরিষ্কার চালের ভাত। আনন্দের কমতি হয়না কোথাও। সেই ১৮৪৬ সনে এই অজপাড়াগাঁ নতিপোতার কাঁচা রাস্তার একহাঁটু কাদাজল পেরিয়ে, কলেরা বসন্ত ম্যালেরিয়া মোকাবেলা করে, সাহেবরা গড়ে তুলেছিল রোমান ক্যাথলিক চার্চ-মিশন পলি। এখন এসব পেছনে ফেলে ফাদাররা ফিরে যাচ্ছে যার যার দেশে, এই উনিশ চুয়াত্তরেই। মাঝখান থেকে কিছু মানুষ স্বধর্ম ত্যাগ করে বেছে নিল সাহেবদের খৃষ্টধর্ম। যীতেন্দ্র হলো যোসেফ, প্রহল্লাদ হলো পিটার। নিম্নবর্গের মানুষের ইতিহাস বুঝি এমনই, শোষণে শোষণে শুধু প্রাণই নাস্তানাবুদ হয় না।, ওরা ধর্মও হারায়। কিন্তু মূল মানুষটা থাকে ওই একই। জীবন পাল্টায় না, পাল্টায় নাম, পাল্টায় ধর্ম। বুকের ভেতর সব সময় নানা রকম এসে বাসা বাঁধে। এসব ধর্মান্তরিত মানুষগুলো নিয়েই উপন্যাসটির আখ্যান ভাগটি রচিত হয়েছে, এদের সাথে আছে নতিপোতার মৃৎশিল্পীদের বাঁচা মরার লড়াই। যা আমাদের নতিপোতা গ্রামের ইতিহাস। লেখকের মেদহীন ভাষাশৈলী পাঠককে স্বস্তি দেবে। সাহিত্যে স্বীকৃতি স্বরুপ পেয়েছেন জীবননগর সাহিত্য পরিষদ পদক (২০১১), কাঙাল হরিনাথ মজুমদার পদক (২০১৫)।
নাসিমা আনিসঃ কথাসাহিত্যিক নাসিমা আনিস মেহেরপুরের কৃতি সন্তান বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক হাবিব আনিসুর রহমানের স্ত্রী। তিনি ঢাকার ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ থেকে অনার্স সহ এমএ ডিগ্রী লাভ করেন।কাঞ্চনের জন্য ভালবাসা, চন্দ্রভানুর পিনিস, বৃহন্নালা বৃত্তান্ত, সূর্য ওঠার সময়, কুয়াশা কুয়াশা ভোর, স্বপ্ন আমার বাঁচবো, মোহিনীর থান,কিডনির কারবার প্রভৃতি তাঁর গ্রন্থ। মেহেরপুরের মুজিবনগরের ঐতিহ্যবাহী বল্লভপুরে তাঁদের স্থায়ী আবাস। তার লেখা গল্প ‘কয়লা নামে কোন জায়গা নেই’।
হাবিব আনিসুর রহমান ও নাসিমা আনিসের অসাধারণ মেধাবী কন্যা আদবানা আনিস বুয়েট থেকে স্থাপত্যবিদ্যায় অনার্স সম্পন্ন ক’রে একটি স্বনামধন্য ফার্মে সিনিয়র আর্কিটেক্ট হিসেবে কর্মরত। পুত্র এস এম আসিফুর রহমান সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে এম বি এ পড়তে গিয়ে সাউদার্ণ ইলিনয়স ইউনিভার্সিটি এডওয়ার্ডভিল ২০২১ কমপিটিটিভ গ্রাজুয়েট এওয়ার্ড লাভ করেছেন।
( লেখক – সিনিয়র সাংবাদিক ও সাপ্তাহিক মুক্তিবানীর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক)
পূর্ববর্তী খবর