মেহেরপুর প্রতিনিধি;
মেহেরপুরে ভালোবাসায় বাঁধ সেঁধেছে কাঁটা তারের বেড়া প্রেমিক প্রেমিকারাও আবদ্ধ হতে পারছেন না বিবাহ বন্ধনে। আইনী জটিলতায় বিবাহিতরা ঠাঁই পাচ্ছেন না শশুর বাড়ি। তবুও ভালবাসার মানুষের রেখে দেয়া স্মৃতি বুকে নিয়ে দিনযাপন করছেন অনেকেই । প্রতিক্ষা আর বিষাদের ছায়া তাদের মনে। মেহেরপুরের সীমান্ত এলাকা ঘুরে জানা গেছে, তরুণ তরুণীদের ভালবাসার বিচিত্রিসব তথ্য। সীমান্তবর্তী একটি গ্রামের নাম শোলমারী। সীমান্তে রয়েছে কাঁটাতারের বেড়া আর ছোট্ট একটা নদী। তবে বিভিন্ন উৎসবে কাঁটা তারের বেড়ার গেট খুলে দেয়া ছাড়াও ক্ষেত খামারে কাজ করা ছাড়াও নদীতে গোসল করতে আসে দু বাংলার তরুণ তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ। দেখা হয় দুই বাংলার মানুষের। কয়েকদিনের দেখা-সাক্ষাতের মধ্যেই কারো সাথে হয়ে ওঠে প্রেমে সম্পর্ক। এই সম্পর্ক গড়ে প্রেম ভালবাসা ও বিয়েতে।
শাহরুখ আহমেদ জানান, কাঁটাতারের বেড়ার পাশে ঘাঁস কাটতে গিয়ে ২০১৬ সালে পরিচয় ঘটে ভারতের নদীয়া জেলার করিমপুর থানার নাটনা গ্রামের সীমা সাহার সাথে। সিমা সাহাও আসতেন কৃষক বাবাকে খাবার দিতে। এভাবেই দেখা সাক্ষাত হয় দুজনার। শুরু হয় মন দেয়া নেয়ার। এক পর্যায়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন নিয়ে ২০১৭ সালে কাঁটা তারের রেড়া পার হয়ে ভারতে যান শাহরুখ। সেখানে গিয়ে সীমা সাহাকে বিয়েও করেন তিনি। কিন্তু দুই দেশের আইনী জটিলতায় সীমা সাহাকে রেখে বাংলাদেশে ফিরে আসতে হয় তাকে। পরে আর যাওয়া হয়নি। কাঁটাতারের বেড়ায় উকি দিয়ে মাঝে মধ্যে দুর থেকে দেখা হয় তাদের। আসার সময় সীমার পায়ের নূপূর নিয়ে আসে শাহরুখ। সীমাকে না পাওয়ার বেদনা যখন আষ্টেপৃষ্ঠে আঁকড়ে ধরে তখন নুপূরকে বুকে চেপে চাপা কান্না করে সে। জীবনে সীমাকে যখন পাওয়া হলো না যখন, তখন আর কোন দিনও বিয়ে করবেন না তিনি। শুধু শাহরুখই নয় মেহেরপুর সীমান্ত গ্রামে এমন অর্ধশত ছেলে মেয়ে দুই বাংলার মধ্যে বিয়ে করে সেতু বন্ধন তৈরি করেছেন। কিন্তু আইনিজটিলতা ও সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া তাদের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। ওই গ্রামের আলমগীর হোসেন জানায়, যখন কাঁটা তারের বেড়া ছিলনা তখন ভারতের মানুষের সাথে আমাদের দেখা সাক্ষাৎ, চলাফেরা হতো। এভাবে একটি মেয়ের সাথে সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। কিন্তু দুজনেরই পরিবারের লোকজন বিয়েতে রাজি হয়নি। আজো দুজন দুজনার পথ চেয়ে বসে আছি। মাত্র কয়েকহাত দুরের রাস্তা হলেও আর যেতে পারিনা। শুধু ইশারায় কথা হয়। মাত্র একটি কাঁটা তারেরর বেড়া আমাদের বিভক্ত করে রাখলেও ভালবাসা কমাতে পারেনি। যুবক জাকির হোসেন জানায়, ওপারের কাগজিপাড়া গ্রামের একটি মেয়ে আমাকে অনেক ভালবাসে। আমিও তাকে ভালবাসি। যখন তার কথা খুব মনে পড়ে তাকে ফোন করলে সেও কাঁটাতারের ওপারে দাঁড়িয়ে আমাদের দেখা হয়। জানিনা এর শেষ পরিনতি কি হবে। অনেক ভুলতে চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারিনি। আমাকেও হয়তো সারা জীবন ভালবাসার স্মৃতি নিয়ে নিঃসঙ্গ জীবন কাটাতে হবে। হরিরামপুরের স্থানীয় জন-প্রতিনিধি সানোয়ার হোসেন জানায়, ভারতের বেতায় গ্রামের অনেক মেয়েরো আগে আমাদের গ্রামে বেড়াতে আসত। অনেকেই প্রেমের সম্পর্ক করে বিয়ে করে এখনও সংসার করছে। আবার অনেক ছেলেই ভারতে বিয়ে করে সেখানে জীবন যাপন করছে। একসময় দু পক্ষের লোকজন বেড়াতে আসতে পারত। কিন্তু কাঁটা তারের বেড়া দেয়ার পর আর আসা-যাওয়া হয়না। দুয়েক বছর পর হয়ত একবার দেখা হয়। বাবা মায়েরাও সন্তানদের স্মৃতি বুকে নিয়ে আছে। কথা সাহিত্যিক রফিকুর রশীদ বলেন, কোনদিন ভালবাসা কোনো বাঁধায় মানেনি। কাটাঁতারের বেড়া ভেদ করে ভালবাসার টান দিয়েছে এটাইতো ভালবাসা। একটি বেড়া শুধুমাত্র দুজনার দর্শনকে দুরে রাখতে পেরেছে। মনের মাঝে যে ভালবাসা লুকায়িত রয়েছে সেটি শেষ হবার নয়। অন্যদিকে কবি বঙ্কিম তার ইন্দিরা উপন্যাসে বলেছেন, সংসার সেতো নন্দনবন যেখানে পুরুষরা পারিজাত ফুলের বান মারিয়া নারী জনম সার্থক করে, পা দিলে পুরুষরা হয় ভেড়া নারীরা হয় আপ্সরা। সে বাসনা পুর্ণ হচ্ছে না সীমান্তের যুবকদের। তাদের দাবী আইনী জটিলতা দূর করে তাদের জীবনকে মধুময় করার সুযোগ দেয়া হোক