মেহেরপুর প্রতিনিধিঃ
বরই বাংলাদেশের অন্যতম একটি দেশী ফল। একসময় বাড়ির আঙ্গিনায় লাগানো বরই গাছে থেকেই চাহিদা মিটতো মানুষের। সময়ের সাথে সাথে বাণিজ্যিক ভাবে এখন হচ্ছে বরই চাষ। আকার আকৃতি আর স্বাদেও এসেছে ভিন্নতা। মেহেরপুর জেলা শহর ছাড়াও ছোট বড়ো প্রায় সকল হাট-বাজারে বিভিন্ন জাতের বরইয়ের পসরা সাজিয়ে বসে থাকেন বিক্রেতা।
মেহেরপুর জেলার সদর, মুজিবনগর ও গাংনী উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামেই বাণিজ্যিকভাবে বরই চাষ করা হলেও শোভা বাড়াচ্ছে বাড়ির আঙ্গিনায় দেশী বরই।
এমন কোন বাড়ি নেই যে বাড়ির আঙ্গিনায় বরই গাছ নেই। অনেকে বাড়ির আঙ্গিনায় বরই গাছ থেকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বপ্নও দেখেন। কারণ শৈশবে প্রতি কেজি বরই ২-৩ টাকা কেজি থাকলেও চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে তা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকা কেজি দরে। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে আত্ত্বীয় স্বজনের বাড়িতেও পাঠানো হয়ে থাকে বরই। এরপর তা বিক্রি করা হয়ে থাকে। বিক্রির জন্য এখন নিজেকে বাজারেও যেতে হয়না। উঠতি বয়সের অনেক তরুণ গাছ থেকে পেড়ে তা ক্রয় করে বাজারে বিক্রি করে থাকে।
বর্তমানে মেহেরপুর জেলার প্রায় প্রতিটি বাড়ির আঙ্গিনার গাছে দুলছে রসে ভরা সুমিষ্ট পরিপক্ব দেশী বরই। গাছের ডালে ডালে লাল-সবুজে আপেলের মতো টসটসে রসে টইটম্বুর বরই দোল খাচ্ছে।
একটু ঝড়ো বাতাস হলেই দড়বড় করে গাছ থেকে ছুটে পড়ছে টিনের চালে কিংবা মাটিতে।
বাড়ির আঙ্গিনায় বরই গাছের আধিক্য লক্ষ্য করা গেছে জেলার গাংনী উপজেলার মাইলমারী গ্রামে। যে গ্রামের প্রতিটা বাড়ির আঙ্গিনায় দুলছে ছোট বড়ো বিভিন্ন নামের দেশী বরই। এখানে বরইকে কুল বলা হয়ে থাকে। টক কিংবা মিষ্টি সবধরনের কুল গাছ এ গ্রামে রয়েছে।
মাইলমারী এলাকার মেয়েরা টক জাতীয় কুল, গাছ থেকে পেড়ে তা কাচা মরিচের সাথে খেতে খুব পছন্দ করে। একইসাথে ভোরবেলা চুরি করে কুল কুড়ানোর প্রবণতাও রয়েছে। অবশ্য চুরি করে কুল কুড়ানোর মধ্যে গ্রামের মেয়েরা আলাদা একটা মজা অনুভব করেন যদিও এটা জঘন্য অপরাধ।
কুল থেকে বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু মজাদার আচার বা চাটনিও তৈরি করে থাকেন এ গ্রামের মা-বোনেরা।
মাইলমারী গ্রামের বাড়ির আঙ্গিনায় বরই গাছ রয়েছে এমন একাধিক মালিক/মহিলার সাথে আলাপকালে তাঁরা জানান, বাণিজ্যিকভাবে চাষের মতো বাড়ির আঙ্গিনায় বরই গাছে কোনরকম পরিচর্যা ছাড়াই হাজার হাজার বরই ধরে। এসব বরই নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে তাঁরা পাড়া প্রতিবেশী ও আত্ত্বীয় স্বজনের বাড়িতে দিয়ে থাকেন। অনেকে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে তা বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বীও হচ্ছেন।
এ বরই উৎপাদনে তাদের কোন রকম খরচ হয়না এবং কৃষি অফিসের কোন পরামর্শেরও প্রয়োজন পড়েনা বলে জানান।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানান, বর্তমানে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে বরই চাষ করা হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে বরই চাষিদের পরামর্শ দেওয়া অব্যাহত রয়েছে।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং বাজারদর ভালো হওয়ায় বরই চাষিরা তাদের আশানুরূপ ফলন ও মূল্য পাবেন বলে আশা করা যায়।