প্রথম রাজধানী :
মেহেরপুরের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, সংসদ সদস্য, বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা ও সমাজসেবক মোহাম্মদ ছহিউদ্দিন বিশ্বাসকে স্বাধীনতা পদকে (মরনাত্তোর) ভূষিত করা হচ্ছে। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য তাঁকে এই রাষ্ট্রীয় পুরষ্কার প্রদান করা হচ্ছে।
এবছর “স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ” ক্যাটাগরিতে এ পুরস্কার পেয়েছেন মেহেরপুরের কৃতি সন্তান, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মরহুম মোহাম্মদ ছহিউদ্দিন বিশ্বাস।
বৃহস্পতিবার সকালের দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা “স্বাধীনতা পদক-২০২২ তুলে দেন। ” মরহুম ছহিউদ্দীন বিশ্বাসের পুত্র , জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ও মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরহাদ হোসেন এম.পি তার পিতার পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন।
‘মোহাম্মদ ছহিউদ্দিন ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং পরবর্তীকালে অন্যান্য গণ আন্দোলনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেন। ১৯৫০ সাল পর্যন্ত তিনি ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৫১ সালে তদানীন্তন মেহেরপুর মহকুমা আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫১-৫৮ ও ১৯৬৪-৬৮ পর্যন্ত তিনি মহকুমা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক এবং পরে সহ-সভাপতি ছিলেন। ১৯৬৯-৭৫ সালে জনাব ছহিউদ্দিন মেহেরপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।
উইকিপিডিয়াতে উল্লেখ করা হয়,ছহিউদ্দিন মেহেরপুর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। ১৯৫৮ সালে তিনি মেহেরপুর পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচত হন।
১৯৫৮ সালের সেপ্টেম্বর মাস। মেহেরপুরে এলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।মেহেরপুর পৌরসভার কালাচাঁদ হলের সামনে জনসভা হলো। সভায় সভাপতিত্ব করেন মেহেরপুরের জননেতা মোহাম্মদ ছহিউদ্দিন।১৯৭০ সালের নির্বাচনের আগে ৩১ আগষ্ট ১৯৭০ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এলেন মেহেরপুরে এবং বিশাল জনসভা হলো।সভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন তৎকালীন মেহেরপুর মহকুমা আওয়ামীলীগ সভাপতি মোহাম্মদ ছহিউদ্দিন।
১৯৬৬ সালে তিনি ছয়দফা আন্দোলনে ভুমিকা রাখেন। ১৯৭০ সালের পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পরিষদ সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হন।
মোহাম্মদ ছহিউদ্দিন ১৯২৩ সালে তৎকালীন নদীয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার তেহট্ট থানার অন্তর্গত লালবাজার এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন।তার পিতা মোঃ ইয়াকুব বিশ্বাস ও মাতা মোছাঃ সামছুন নেছা। তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলার ভি.জে হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করে রাজশাহী গভর্মেন্ট কলেজে ভর্তি হন।
তার ছেলে ফরহাদ হোসেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও মেহেরপুর-১ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য।ছহিউদ্দিনের বড় ছেলে শহীদ সাদেক হোসেন বাবলু, মেজো ছেলে ইকবাল হোসেন বুলবুল এবং ছোট ছেলে জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক শহীদ শরফরাজ হোসেন মৃদুল।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সংগঠন হিসেবে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৭৩ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচিত হন এবং ১৯৭৫ সালে মেহেরপুর জেলার গর্ভনর নিযুক্ত হন।তিনি ১৯৮৬ সালেও এমপি ছিলেন।
বিনম্র ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছহিউদ্দিন পঞ্চাশের দশকে ছাত্রজীবনে রাজনীতি শুরু করেন। ব্যক্তিগত জীবনে নিরহঙ্কারী ছহিউদ্দিন তাঁর সততা ও ত্যাগের জন্য বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলায় সর্বজনপ্রিয় ছিলেন। স্বাধীনতার পর মেহেরপুরের উন্নয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
তাঁর মৃত্যুর পরপরই জেলার সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। হাজার হাজার লোক গ্রাম থেকে ছুটে আসে মরহুম নেতার বাসভবনে। জেলা প্রশাসক ঐদিন সরকারী অফিস-আদালত ছুটি ঘোষণা করেন। বাজার কমিটি সকল দোকান ও কলকারখানা বন্ধ ঘোষণা করে। মেহেরপুর প্রেসক্লাবে মরহুম নেতার স্মরণে শোক বই খোলে। শহরে শোক মিছিল বের হয় এবং স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়। এ অঞ্চলের সকল দলের সকল মতের মানুষ হাজার হাজার মানুষ জননেতার জানাজায় শরিক হন। মেহেরপুরের শামসুজ্জোহা পার্কে এ মহান নেতার পাথরে খোদায় করা ছবি টাঙানো রয়েছে। মেহেরপুর তথা এ অঞ্চলের রাজনৈতিক ইতিহাসে সহিউদ্দিন একটি ঐতিহাসিক নাম। মেহেরপুরের উন্নয়নে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাখেন। তাঁর অবদান এলাকাবাসী যুগ যুগ ধরে স্মরণ করবে।
পূর্ববর্তী খবর