প্রথম রাজধানী:
গাংনী শহরাঞ্চলে বিদ্যুত সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গ্রামাঞ্চলের মানুষ। গ্রামাঞ্চলে ২৪ ঘন্টায় মাত্র তিন ঘন্টা বিদ্যুত সরবরাহ থাকছে। বিদ্যুত বিতরণে বৈষম্যের এমনি অভিযোগ তুলেছেন খোদ গ্রামের বিভিন্ন পোলট্রী ফার্মের মালিক ও হাস্কিং মিল মালিকরা। জাতীয় গ্রীডে সমস্যাজনীত কারণে এ ধরনের সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পল্লী বিদ্যুত সমিতি। তাহলে শহরাঞ্চলে বিদ্যুত সরবরাহ স্বাভাবিক কেন? এমন প্রশ্নের জবাব মেলেনি।
পল্লী বিদ্যুত সমিতির গাংনী জোনাল অফিসের হিসেব অনুযায়ি, গাংনীতে ১১ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে পিক আওয়ার ও অফ পিক আওয়ারের জন্য বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র সাড়ে চার মেগাওয়াট। যা প্রয়োজনের তুলনায় যৎসামান্য। ফলে পালাক্রমে বিভিন্ন ফিডারে বিদ্যুত সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে লেঅডশেডিংয়ের মাত্রা অনেক বেড়েছে।
এলাকাবাসিরা জানান, এমনিতেই অনাবৃষ্টি, তাপদাহের সাথে পড়ছে গুমটো গরম। তার উপর বিদ্যুতের লোডশেডিং। শহরে বিদ্যুত সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও গ্রামাঞ্চলে অস্বাভাবিকভাবে চলছে লোডশেডিং। তিন ঘন্টা পরপর ১০/১৫ মিনিটের জন্য বিদ্যুত সরবরাহ করা হচ্ছে। আবার কখনও সারাদিনের জন্য বিদ্যুত বন্ধ রাখা হচ্ছে। এতে জনজিবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কারখানা, সেচপাম্প এমনকি পোলট্রী ফার্মের মুরগীর অকাল মৃত্যু ঘটছে। শিমুলতলা গ্রামের পোলট্রীর মালিক কাউসার জানান, গেল এক সপ্তাহ যাবত লোডশেডিংয়ের কারণে তার পার্মের ২১০টি মুরগী মারা গেছে যার একেকটির ওজন অন্ততঃ চার কেজি। মোটা অংকের টাকা লোকসান হয়েছে। অনেকেই পানির দরে মুরগী বিক্রি করে দিচ্ছে। একই কথা জানালেন সহড়াবাড়িয়া গ্রামের পোলট্রী ফার্মের মালিক ফজলুর রহমান। তিনি আরো জানান, গত তিন চারদিন বিদ্যুতের অভাবে অক্সিজেন না পেয়ে ১৪৪টি মুরগী মারা গেছে। ফলে বাজারে ১০০ টাকা কেজি দরে সব বিক্রি করে দেয়া হয়। এতে ৪৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। হাড়াভাঙ্গা তোফাজ্জেল রাইস মিল মালিক জানান, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে ধান ভাঙ্গানো ছাড়াও মসলাপাতি গুড়া করা সম্ভব হচ্ছে না। কোরবানীর ঈদ দুয়ারে কড়া নাড়ছে। এখন কাজের চাপ। অথচ বিদ্যুতের ভিলকীবাজিতে অতিষ্ঠ। অনেকেই সারাদিন ব্যয় করেন ধান ও মসলা ভাঙ্গাতে এসে। মসলা ব্যবসায়ি ছাতিয়ানের কোরবান আলী জানান, তিনি নিজে মরিচ হলুদসহ নানা জাতের মসলা কিনে মিলে ভাঙ্গিয়ে বিক্রি করেন। বিদ্যুত না থাকায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না। সবজি চাষিরা অভিযোগ করে বলেছেন, তারা ফসলে সেচ দিতে না পারায় ফসল নিয়ে তারা চিন্তিত।
মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির গাংনী জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) আবুল কাশেম জানান, গড়ে সারাদিনই লোডশেডিং চলছে। আমরা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ করতে চাই। কিন্তু আমার এলাকায় ১১ মেগাওয়াট চাহিদা থাকলেও সরবরাহ পাচ্ছি সাড়ে ৪ মেগাওয়াট। আমাদের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন গ্যাস স্বল্পতার কারনেই এরকম লোডশেডিং হচ্ছে। এটা জাতীয় সমস্যা। আরও কিছুদিন এরকম সমস্যা হতে পারে। শহর ও গ্রামাঞ্চলের মধ্যে বিদ্যুত বিতরণে বৈষম্যের ব্যাপারে কোন জবাব দেননি এই ডিজিএম।