এক বছরের ব্যবধানে মেহেরপুর জেলায় কলা চাষের জমি বেড়েছে ৮০০ হেক্টর। ফলে জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে কলার আবাদ হয়েছে। রোগবালাই কম ও উৎপাদন খরচের তুলনায় লাভ বেশি হওয়ায় নিয়মিত ফসল ছেড়ে জেলার অনেকে কলা চাষের দিকে ঝুঁকছেন। কৃষি বিভাগের আশা, চলতি মৌসুমে প্রায় ২০০ কোটি টাকার কলা বেচাকেনা হবে।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় কলা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৭১০ হেক্টর জমি। কিন্তু জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ২ হাজার ৫৩৬ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮২৬ হেক্টর জমি বেশি। গত বছর ১ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হয়েছিল। মেহেরপুর জেলায় মেহেরসাগর, সবরি ও বাইশছড়ি জাতের কলার বেশি আবাদ হয়।
এক বিঘা জমিতে কলা চাষে প্রথম বছর ৩০-৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি বিঘায় এক মৌসুমে ৪০০-৪৫০ কাঁদি কলা পাওয়া যায়, যা জমি থেকেই পাইকারি বিক্রি হয় লক্ষাধিক টাকায়।
জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, কলার চাহিদা থাকে সবসময়। অন্য ফসলের তুলনায় উৎপাদন খরচও কম। লাভ বেশি হওয়ায় এ জেলায় দিন দিন বাড়ছে কলার চাষ। কলার চারা লাগানোর এক বছরের মধ্যে গাছে কাঁদি আসে। এছাড়া কলা চাষের সঙ্গে অন্যান্য ফসলও চাষ করা যায়। কলা চাষের যে খরচ হয় সেটা সাথী ফসল থেকে উঠে আসে। ফলে অনেক সময় কলা বিক্রির পুরো টাকাটাই থেকে যায় কৃষকের ঘরে।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের সাবেক সেনা সদস্য আলফাজ উদ্দীন বলেন, ‘সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে এলাকার কিছু কৃষকের পরমর্শে কলা চাষ শুরু করি। গত মৌসুমে এক বিঘা জমিতে কলা চাষ করে ৬০ হাজার টাকা লাভ হয়। ফলে চলতি মৌসুমে চার বিঘা জমি লিজ নিয়ে কলা চাষ করছি। অন্য ফসলের তুলনায় কলা চাষে কম খরচে বেশি লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে।’
আরেক কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘গত বছর আমার পাঁচ বিঘা জমিতে কলা খেত ছিল। চলতি মৌসুমে সাত বিঘা জমিতে কলার আবাদ করেছি। আমার দেখাদেখি পাশের অনেকে তাদের জমিতে কলা চাষ শুরু করেছেন। গত বছর ভালো ফলন হয়েছে। চলতি মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকলে ফলন আরো ভালো হবে। ৩৫০-৪৫০ টাকয় প্রতি কাঁদি কলা বিক্রি হবে।’
মেহেরপুর সদর উপজেলার বন্দর গ্রামের কলা ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কলার কাঁদি অনুযায়ী বিভিন্ন বাগানের দাম নির্ধারণ হয়। দেখা যায় একটি কলার কাঁদি আমরা খেত থেকে ৩২০-৩৮০ টাকা দাম দিয়ে ক্রয় করি। আমরা আবার খেত থেকেই অনেক সময় অনেক লাভে বিক্রি করে দিই। তা না হলে জেলার বাইরের ব্যবসায়ীদের কাছে কাঁদি ধরে বিক্রি করে দিই।’
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শংকর কুমার বলেন, ‘মেহেরপুরের মাটি কলা চাষের উপযোগী। উৎপাদন খরচও তুলনামূলক কম। ফলে জেলায় কলা চাষ দিন দিন বাড়ছে। গত বছর ১ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে কলা চাষ হয়েছিল। দাম ভালো পাওয়ায় চলতি বছর কলা চাষ আরো বেড়েছে। এ বছর ২ হাজার ৫২৬ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ বেড়েছে। আমাদের এলাকায় মেহেরসাগরের পাশাপাশি সবরি কলার উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছেন চাষীরা। এ বছর ১ লাখ ১৬ হাজার ৪৫০ টন কলার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। সেক্ষেত্রে ১৫০-২০০ কোটি টাকার কলা বেচাকেনা হবে।’