মেহেরপুর প্রতিনিধি;
মেহেরপুর ব্রিটিশ আমেরিকা টোব্যাকো কোম্পানির কর্মকর্তার স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদে তামাক চাষীদের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১১ মে) দুপুরে সদর উপজেলার কালি গাংনী গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়।
ব্রিটিশ টোব্যাকো কোম্পানির তামাক চাষী মানিক হোসেন বক্তব্যে বলেন, আর এম হাসিবুর রহমান, এরিয়া ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম যোগদানের পর থেকে মেহেরপুরে গড়ে তুলেছেন বড় ধরনের এক সিন্ডিকেট। আর সেই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্য দিয়ে অন্য জেলার তামাক ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে নিম্নমানের তামাক ক্রয় করে কোম্পানীর টাকা লুটপাট করছে। দালাল চক্র আর কোম্পানির কয়েকজন কর্মকর্তার ফাঁদে পড়ে এলাকার অনেক তামাক চাষীই এখন সর্বশান্ত হয়েছেন। ব্রিটিশ কোম্পানির বঞ্চিত তামাক চাষীরা জানান,কোম্পানি থেকে ঋণ নেওয়া টাকার পরিমান মতো তামাক ক্রয় করছে তারা। টাকা পরিশোধ হওয়ার পর আর কোনো তামাক কিনছেনা কোম্পানি। এতে পথে বসেছে চাষীরা। কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছে এলাকার তামাক চাষীরা।
উল্লেখ্য প্রবীণ তামাক চাষী নওয়াপাড়া গ্রামের মইনুল হাসান পচা অভিযোগ করে বলেন, আমি দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে গাংনী উপজেলার নওয়াপাড়া বাজারে ব্রিটিশ টোব্যাকো কোম্পানির ডিপো বসিয়ে সুনামের সাথে তামাক বিক্রয় করে আসছি। এবং আমার নেতৃত্বে এলাকার হাজার হাজার তামাক চাষী এই কোম্পানিতে তামাক বিক্রয় করে আসছেন। এবছর আমি ১৫ বিঘা জমিতে তামাক চাষ করেছিলাম। আমার ১০০ শত ৩০ বেল তামাক উৎপাদন হয়েছে। কোম্পানি মাত্র ৬৯ বেল তামাক নেওয়ার পরে আর তামাক নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন।
বাকি তামাক নিয়ে আমার সাথে তুহিন হোসেন প্রতারণা শুরু করেছেন। আমার মতো শত শত তামাক চাষীর ঘরে তামাক পড়ে আছে। ব্রিটিশ আমেরিকা টোব্যাকো কোম্পানির ম্যানেজার হাসিবুর রহমান, এরিয়া ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম ও তুহিনের কবল থেকে চাষীদের রক্ষা করা না গেলে এই অঞ্চলে তামাক চাষ কমে আসবে।
সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সাইফুল ইসলাম, তুহিন, নওয়াপাড়া গ্রামের তামাক ব্যবসায়ী দালাল বকুলের মাধ্যমে বেল প্রতি ৫০০ টাকা উৎকোচ গ্রহণ করে অন্য জেলার হাজার হাজার বেল তামাক ক্রয় করছেন। এছাড়াও নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্য দিয়ে নির্দিষ্ট ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে নিম্নমানের তামাক ক্রয় করে কোম্পানির টাকা লুটপাট করছেন বলে জানান তিনি।
ব্রিটিশ আমেরিকা কোম্পানির তামাক চাষী ও গ্রাম পুলিশ নিলয় কুমার দাস জানান,কোম্পানির কথায় এবছর আমি ০৯ বিঘা জমিতে তামাক চাষ করেছিলাম। আমার তামাক উৎপাদন হয়েছে ৬৮ বেল। এর মধ্যে কোম্পানি ৪০ বেল তামাক নিয়েছে । বাকি তামাক আমার বাড়িতে পড়ে আছে।
আমি কোম্পানির এরিয়া ম্যানেজার সাইফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, কোম্পানি র চাহিদা অনুযায়ী তামাক ক্রয় করা হয়ে গেছে। আর তামাক নেওয়া হবে না। কোম্পানির লোকজন নানা প্রলোভন দেখিয়ে তামাক চাষ করান। জীবনের ঝুকি নিয়ে তামাক চাষ করে এখন তামাক ক্রয় করছেনা কর্তৃপক্ষ। ওজনে কম ও তামাকের নায্য মূল্য না দেয়া এবং তামাক ক্রয়ে অনিয়ম,স্বেচ্ছাচারিতার কারণে পথে বসেছে তামাক চাষীরা।
মানববন্ধনে বক্তব্যে কালিগাংনী গ্রামের তামাক চাষী রুহুল আমিন, মিজানুর রহমান, হামিদুল ইসলাম,গোলাম দাউদ, জাকির হোসেন, জিনারুল ইসলাম, মানিক হোসেন বলেন, ম্যানেজার হাসিবুর রহমান, সাইফুল ইসলাম, তুহিন হোসেন,লিফ অফিসার মোজাম্মেল হক, কোম্পানিতে যোগদানের পর থেকে প্রকৃত চাষীরা ক্ষতির মুখে পড়েছে। কৃষকের তামাক না নিয়ে তারা নওয়াপাড়া গ্রামের তামাক চাষী ও ব্যবসায়ী দালাল বকুলের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের নিকট থেক বেল প্রতি ৫০০ টাকা উৎকোচ গ্রহণ করে অন্যজেলার তামাক ক্রয় করে আনছেন। এঘটনায় এলাকার প্রতিটি চাষীর ঘরে তামাক পড়ে আছে।
তামাক চাষীরা আরও জানান দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত পুর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান, ও অবিলম্বে অপসারণ করারও দাবি জানান। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে। আবারো বড় ধরনের কর্মসৃচী দেওয়া হবে। এব্যাপারে সাইফুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,আপনাদের ভুল তথ্য দিয়েছে। অন্য জেলার তামাক নেওয়া হচ্ছে না। এছাড়াও চাষিদের তামাক পুড়িয়ে ফেলার ঘটনা তার জানা নাই।