মেহেরপুর প্রতিনিধি:
বাচেনা খাতুন নামের এক নারীর অপারেশনের পর পেটের মধ্যেই “কাঁচি” রেখে সেলাই করে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মেহেরপুরের গাংনীর উপজেলার রাজা ক্লিনিকে প্রায় ২০ বছর পূর্বে পিত্তথলির পাথর অপারেশন করিয়েছিলেন বাছেনা খাতুন। অপারেশনের সময় পেটের মধ্যে কাঁচি রেখেই সেলাই করে দিয়েছিলেন চিকিৎসক। ২০ বছর পর রাজশাহীতে গিয়ে ধরা পড়লো বিষয়টি। আবারও অপারেশন করে সেই কাঁচিটি বের করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক।
ভুক্তভোগী নারীর নাম বাচেনা খাতুন (৫০)। তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার ঢিৎলা ইউনিয়নের হাপানিয়া গ্রামের আব্দুল হামিদের স্ত্রী। গত ২০০২ সালের ২৫ মার্চ বাছেনার অপারেশন করেন সার্জারি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মিজানুর রহমান। তার সঙ্গে সহকারী হিসেবে ছিলেন রাজা ক্লিনিকের পরিচালক ডা. পারভিয়াস হোসেন রাজা ও অ্যানেস্থেসিয়া করেন ডা. তাপস কুমার। অপারেশনের এক সপ্তাহ পর বাছেনাকে প্রেসক্রিপশন দিয়ে ছাড়পত্র দেওয়া হয় । অসুস্থ বাচেনা খাতুন জানান, অপারেশনের পাঁচ থেকে ছয় মাস পর পেটে ব্যথা শুরু হলে তিনি রাজা ক্লিনিক এর স্বত্বাধিকারী চিকিৎসক পারভিয়াস হোসেন রাজার শরণাপন্ন হন। ডাঃ পারভিয়াস হোসেন রাজার পরামর্শে তাকে ওষুধ খাওয়ানো হয়। কিন্তু কোনো পরিবর্তন না দেখে বাচেনা খাতুন কখনো চুয়াডাঙ্গা, কখনো আলমডাঙ্গা কখনো গ্রাম্য ডাক্তার এমনকি যখন যে যা বলেছে সেখানেই ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন একটু ভালো থাকার আশায়। কয়েকদিন আগে পেটে অসহনীয় ব্যথা শুরু হলে (০২ জনুয়ারী) রাজশাহীর দি ইউনাইটেড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তাকে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। পরে ওই ক্লিনিকে এক্স-রে করে চিকিৎসক দেখতে পান বাচেনা খাতুনের পেটের মধ্যে একটি কাঁচি রয়েছে। পরে চিকিৎসক রোগীর পোশাক পরিবর্তনসহ একাধিকবার এক্সরে করে পেটের মধ্যে কাঁচি থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সেই সাথে তাকে দ্রুত পুনরায় অপারেশন করে কাঁচি বের করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। হতদরিদ্র ও প্রতিবন্ধী বাচেনা খাতুনের স্বামী আব্দুল হামিদ জানান, তার শেষ সম্বল ১০ কাঠা জমি বিক্রি, দুইটা গরু বিক্রি এবং তার বলতে যা ছিল সবটুকুই বিলিয়ে দিয়েছে স্ত্রীর চিকিৎসার পিছনে। বর্তমানে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার পর্যন্ত জোটে না। তিনি কিভাবে পুনরায় অপারেশন করাবেন। রাজা ক্লিনিকের পরিচালক ডা. পারভিয়াস হোসেন রাজা বলেন, আমি বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারি না। আমিও ওই অপারেশনের সময় সহকারী হিসেবে ছিলাম। ভূল হতে পারে। ডা. মিজানুর রহমান একজন সার্জারি বিভাগের ভালো চিকিৎসক। তিনি ওই সময় মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে চাকরী করতেন। তখন আমার ক্লিনিকে সব অপারেশন তিনিই করতেন। তিনিই ভূলটা করতে পারেন। মেহেরপুরে চাকরীর সুবাদে তার সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল। হয়তো বা এটি তার অনাকাঙ্ক্ষিত ভূল। তবুও ২০ বছর বাছেনাকে কষ্ট পেতে হয়েছে। আমি এখন জানতে পারলাম। তাই ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার সব দায়িত্ব আমি নিবো।
মেহেরপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. জওয়াহেরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, অনেক আগেই বিষয়টি খোঁজ নেওয়া উচিত ছিল ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের। রোগী ও রোগীর স্বজনরা ক্লিনিকে কয়েকবার বিষয়টি জানানোর পর আবারও পরীক্ষা করে দেখা উচিত ছিল। ক্লিনিক মালিক সেটি করেননি। আমি বিষয়টি শুনলাম। রোগীর লোকজন লিখিত অভিযোগ দিলে আমি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবা।
পূর্ববর্তী খবর