ডাঃ শওকত আরা বীথি
রিউমেটিক হৃদরোগ নতুন কোন রোগ নয় বরং অতি পুরাতন এক রোগ। রিউমেটিক ফিবার অথবা বাতজ্বরের সাথে এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। করোনারী হৃদরোগের মত ব্যাপক না হলেও এর পরিণতি এতটুকু কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
সম্ভবতঃ ১৯৮৩ সালে ঢাকার একটি দৈনিক পত্রিকায় , ঢাকা শহরে অবস্থিত ‘হৃদরোগ গবেষণাকেন্দ্র’ হতে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল বাংলাদেশে হৃদরোগের হাল হকিকত সম্পর্কে। বাংলাদেশের শহর গ্রাম সব অঞ্চলের মানুষের জন্যই বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমরা জেনেছিলাম এই রোগের বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাখ্যা।
বর্তমান সময়ে রোগ নির্ণয় করার অনেক সুবিধা হওয়ায় এবং কিছুটা সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে রোগের ব্যাপকতা কমে গেলেও গুরুত্ব একেবারেই শেষ হয়ে যায়নি। কারণ অতি ঘিঞ্জি বসতি, স্যাঁতসেঁতে আর্দ্র পরিবেশ নোংরা ধোঁয়া ধূলাবালি স্বাস্থ্যবীধি সম্পর্কে উদাসীনতার ফলে গলায় ঘন ঘন সংক্রমন বিশেষ ধরণের এই হৃদরোগের পটভূমি অর্থাৎ রিউমেটিক হৃদরোগ। এর নাম দেখেই বুঝতে পারা যায় যে, রিউমেটিক ফিভার থেকে এই হৃদরোগের সুচনা।
প্রথমেই রিউমেটিক ফিভার সম্পর্কে কিছু জানা প্রয়োজন। রিউমেরিক জ্বর প্রধাণতঃ অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের মাঝে হয়ে থাকে। “স্ট্রেপটোকক্কাস” নামক একপ্রকার ব্যাকটেরিয়ার বিশেষ একটি গ্রুপের আক্রমণের দ্বারা এই রোগ হয়।এবং টনসিল,ফ্যারিংস ইত্যাদির প্রদাহ এই রোগের সাথে সংশ্লিষ্ট। অর্থাৎ ষ্ট্রেপটোকক্কাস ব্যাকটেরিয়ার ঐ বিশেষ গ্রুপের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা যদি টনসিল বা ফ্যারিংস এ ইনফেকশান হয় এবং সঠিকভাবে চিকিৎসা দ্বারা ঐ জীবানু ধ্বংশ করা না হয় তবে পরবর্তী পরিণতি হিসাবে বাতজ্বর দেখা দেয়। আর একবার বাতজ্বর বা রিউমেটিক জ্বরের পাল্লায় পড়লে আর সঠিক সময় ধরে তার চিকিৎসা শেষ না করলে অনিবার্যভাবে এই জীবানু হৃদযন্ত্রকে আক্রমণ করে। যার নাম হয়ে যায় রিউমেটিক হার্ট ডিজিজ অর্থাৎ বাতজ্বরজনিত কারণে হৃদরোগ। সহজ ভাষায় বলা যায়, টনসিল ফুলে হৃদরোগ। মোট তিনটি ধাপ অতিক্রমের পর হৃদরোগে পৌঁছায়। প্রথমধাপ টনসিলাইটিস দ্বিতীয়ধাপ বাতজ্বর আর তৃতীয়ধাপ রিউমেটিক হৃদরোগ। বিষয়টি সাংঘাতিক নয় কি? কারো হয়ত ছেলেবেলায় বাতজ্বর হয়েছিল,সঠিক সময় ধরে চিকিৎসা হয়েছিল কিনা,মনে থাকবার কথা নয়। পরিণত বয়সে এসে হঠাৎ দেখাগেল তার হৃদযন্ত্র সঠিকভাবে কাজ করছেনা।অতঃপর নানা পরীক্ষা নিরিক্ষার পর সঠিক কারণটি পাওয়া গেল। এবং এমন সব কঠিন Investigations করবার মত সামর্থ অনেকেরই থাকেনা। বিষয়টি অজানাই থেকে যায়।
রিউমেটিক জ্বরের বিশেষ বৈশিষ্ট হচ্ছে এর চেহারা একেবারেই সাধারণ। যেমন জ্বর, জয়েন্টে ব্যাথা,ফুলে যাওয়া এবং এ্যাসপিরিন জাতীয় ট্যাবলেট খেলে ব্যাথা কমে যাওয়া। অনেকে মনে করে এটি এমন কোন কঠিন রোগ হতে পারেনা। কিন্তু এই জ্বরের শেষ পরিণতি যে হৃদযন্ত্রের উপর হামলা হতে পারে এমন ধারণা করতে পারেননা সাধারণ মানুষ। এই অর্থে এই বাতজ্বর খুবই মারাত্মক বলা যায়।হৃদপিন্ডের আবরণ, মাংস,ভালবসহ এমন গভীরে কামড় বসিয়ে দেয় যে,সেই ক্ষত ক্রমশঃ অন্তিম দশায় ঠেলে নিয়ে যায়। যেখান থেকে ফিরে আসার আর কোনউপায় থাকেনা।
বৃটেন,আমেরিকাসহ অন্যান্য উন্নত দেশে রিউমেটিক জ্বর এবং রিউমেটিক হৃদরোগ আজকাল আর দেখা যায়না কিন্তু আমাদের দেশে সে তুলনায় রোগের হার কম হলেও একেবারে ছেড়ে যায়নি। কারণ লোকসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে মোট রুগীর সংখ্যা খুব একটা কম নয় বোধকরি। কারণ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নিয়মকানুন সম্পর্কে আমরা এখনো এক উদাসীন জাতি।
( ডাঃ শওকত আরা বীথি : যুক্তরাষ্ট প্রবাসী)